পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে মেডিকেল পড়ুয়া এক ওড়িয়া ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুই রাজ্যে। ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় এক্স (X)-এ পোস্ট করে লেখে—“দুর্গাপুরে এক ওড়িয়া ছাত্রীর উপর সংঘটিত নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি গভীর বেদনা প্রকাশ করেছেন ও কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবেদন করেছেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ওড়িশা সরকারও ভুক্তভোগী পরিবারকে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে।”
ওড়িশা সরকারের এই পোস্ট রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। বিজেপি বিষয়টিকে তুলে ধরে রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা আক্রমণ করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে।
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে পাল্টা পোস্ট করে লেখা হয়—“ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে কঠোর নিন্দা ও কঠিনতম শাস্তি প্রয়োজন। অথচ এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে— অপরাজিতা অ্যান্টি-রেপ বিল পাশের পরও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তা আইনে রূপ দিতে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এটি এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যার পরিণতি ভয়াবহ।”
তৃণমূলের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে—“যখন কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তখন অপরাধীদের কাছে এটি স্পষ্ট বার্তা দেয়— তারা নির্বিঘ্নে নৃশংসতা চালাতে পারে। নারী সুরক্ষার বুলি আওড়ানো বিজেপির প্রকৃত চেহারা আজ প্রকাশ্যে।”
এর পাশাপাশি তৃণমূল পোস্ট করেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগের বক্তব্যের একটি ভিডিও, যেখানে তিনি বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম, দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক। সেই লক্ষ্যেই রাজ্য মন্ত্রিসভা ও বিধানসভায় পাশ করিয়ে অপরাজিতা বিল পাঠানো হয়েছিল রাজ্যপালের কাছে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও অনুমোদন মেলেনি।”
অভিষেকের ওই বক্তব্য ছিল ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে, যেখানে তিনি কেন্দ্রকে প্রশ্ন করেছিলেন— “দেশে ধর্ষণ-খুনের কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও নতুন বিল আটকে রাখার কারণ কী?”
প্রসঙ্গত, ওই বিল পর্যালোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে তা ফেরত পাঠানো হয়েছে কলকাতার রাজভবনে।
রাজনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর এই পোস্ট রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই এসেছে, বিশেষত যখন বাংলায় নারী সুরক্ষা ইস্যুতে বিরোধী বিজেপি চাপ বাড়াচ্ছে। শনিবারই রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে শুভেন্দু অধিকারী নারী নির্যাতন ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর বক্তব্যের পরপরই ওড়িশা মুখ্যমন্ত্রীর এই পোস্টে বিষয়টি আরও রাজনৈতিক রূপ নেয়।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা কৌশলে ‘অপরাজিতা বিল’ ইস্যুটি ফের সামনে আনা হয়েছে।