রামনবমী ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে এ বছর ছিল আলাদা উত্তেজনা ও নজরদারি। বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের তরফে রীতিমতো শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা ছিল, আর তৃণমূলের পক্ষেও চ্যালেঞ্জ ছিল—একদিকে উৎসবের বিরোধিতা নয়, অন্যদিকে বিজেপিকে ময়দান ছেড়ে না দেওয়া। তবে সব উদ্বেগকে ভুল প্রমাণ করে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যের কোথাও কোনও অশান্তির খবর নেই।
রাজ্যের প্রায় সব বিজেপি নেতাই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ লাঠি হাতে কসরত দেখিয়ে নজর কেড়েছেন, আবার শোভাযাত্রায় অস্ত্র থাকাটাকেই রীতি বলে দাবি করেছেন তিনি। বারাসতের রামনবমী মিছিলে অংশ নিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার ও মিঠুন চক্রবর্তী। মতুয়া সম্প্রদায়ের ব্যাপক অংশগ্রহণও সেখানে নজরকাড়া।
নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী মন্দির নির্মাণের শিলান্যাস করে মিছিল করেন। কলকাতা, ভবানীপুর, মেচেদা সহ একাধিক জায়গায় অংশ নিয়ে দিনভর রাজ্য জুড়ে ঘুরেছেন তিনি। মিছিল করেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, রাহুল সিংহ, শমীক ভট্টাচার্য-সহ একাধিক বিজেপি নেতা।
এ দিকে তৃণমূল নেতৃত্বও রাস্তায় নেমেছেন। কলকাতার ঠনঠনিয়ায় কুণাল ঘোষের মিছিলে দেখা গেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ। বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল জীবনে প্রথম রামনবমী মিছিলে অংশ নেন, সঙ্গে ছিলেন শতাব্দী রায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, বিকাশ রায়চৌধুরীর মতো নেতারা।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি ধরা পড়েছে বীরভূমের দুবরাজপুরে—সেখানে একই রামনবমী মিছিলে পা মিলিয়েছেন বিজেপি ও তৃণমূলের নেতারা। রাজনীতির রং ছাড়িয়ে উৎসবে মিলেমিশে গিয়েছে দুই পক্ষই।
সম্প্রীতির আরও কিছু উদাহরণ দেখা গিয়েছে রামপুরহাট ও মালদহে। কোথাও মুসলিম যুবকরা জল-লজেন্স বিতরণ করেছেন, কোথাও আবার রামনবমীর মিছিলকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে মিষ্টিমুখ করিয়ে।
তবে সবচেয়ে ‘প্রতীকী জয়’ বলা যেতে পারে এবিভিপির যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রামনবমী উদ্যাপনকে। বামপন্থীদের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত এই ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন পরে এবিভিপি অনুষ্ঠান করল সফলভাবে, যা সঙ্ঘ পরিবারের কাছে বড় কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হচ্ছে।