Home রাজ্য শিলিগুড়ি নবজীবন পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী দার্জিলিং স্টেশন, আর্ট ডেকো ধাঁচে হবে পুনঃসংস্কার

নবজীবন পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী দার্জিলিং স্টেশন, আর্ট ডেকো ধাঁচে হবে পুনঃসংস্কার

৮৯ বছরের পুরনো দার্জিলিং শহরের আইকনিক রেলস্টেশন এবার নতুন রূপে ফিরতে চলেছে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের (DHR) ডিরেক্টর ঋষভ চৌধুরী জানিয়েছেন, স্টেশনের পুনঃসংস্কারের জন্য একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (DPR) প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত স্টেশনের প্রাচীন আর্ট ডেকো স্থাপত্যশৈলী পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও সংযুক্ত করা হবে, যাতে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে একটি কার্যকরী ও আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনুমোদিত একটি সংস্থার সহায়তায় এই কাজ করা হচ্ছে, যাতে প্রতিটি নকশা ও উপাদানে ঐতিহাসিক নির্ভুলতা বজায় থাকে।

“এটি শুধুমাত্র একটি ভবনের সংস্কার নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি ঐতিহ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা,” বলেন ঋষভ চৌধুরী।

বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। হিল এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ হেরিটেজ জয় রাইডের আয়োজন করা হয়। ২৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে প্রতিদিন সকালে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য বিনামূল্যে রাইডের সুযোগ রাখা হয়েছে।

DHR-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ধরনের রাইডগুলি পাহাড়ের শিশুদের মধ্যে রেলওয়ের প্রতি আবেগ ও ঐতিহ্যের প্রতি সংযোগ গড়ে তুলছে। DHR শুধুমাত্র পরিবহণব্যবস্থা নয়, এটি একটি ‘জীবন্ত জাদুঘর’, যা অতীতকে সম্মান জানিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে।

ঋষভ চৌধুরী আরও বলেন, “বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস হল আত্মপরিচয় ও স্মৃতির উদযাপন। আমরা গর্বিত যে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক আত্মাকে সংরক্ষণ করছি, একই সঙ্গে আধুনিকীকরণের পথেও হাঁটছি।”

আর্ট ডেকো স্থাপত্যশৈলী কী?

আর্ট ডেকো স্থাপত্যশৈলী (Art Deco Architecture) হল বিংশ শতাব্দীর এক বিশেষ আধুনিক নকশাশৈলী, যা ১৯২০-৩০ দশকে ইউরোপ ও আমেরিকায় সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই শৈলী মূলত ঐশ্বর্য, আধুনিকতা, জ্যামিতিক নকশা এবং কারিগরি উৎকর্ষতা-কে একত্রিত করে।

আর্ট ডেকো স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি

  1. জ্যামিতিক আকার ও রেখা – ত্রিভুজ, জিগজ্যাগ, সূর্যের কিরণের মতো রশ্মিরেখা (sunburst), চতুর্ভুজ প্রভৃতি নকশা।
  2. সমমিতি ও পরিপাটি বিন্যাস – গঠনগতভাবে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও ভারসাম্যপূর্ণ।
  3. ধাতব, কাঁচ ও পাথরের ব্যবহার – ব্রোঞ্জ, স্টিল, কাঁচ প্রভৃতি ব্যবহার করে এক আধুনিক ঝলক তৈরি করা হয়।
  4. ঐশ্বর্যের প্রতীক – আর্ট ডেকো শৈলী সাধারণত বিলাসবহুল ভবন, সিনেমা হল, হোটেল ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
  5. সজ্জার ক্ষেত্রে সূক্ষ্মতা – দেয়ালে খোদাই, আলংকারিক অলঙ্করণ, এবং রঙিন টাইলসের ব্যবহার।

উদাহরণ

  • Empire State Building (New York) – ক্লাসিক আর্ট ডেকো দৃষ্টান্ত।
  • Victoria Memorial Hall (Kolkata) – যদিও এটি প্রধানত ইন্ডো-স্যারাসেনিক শৈলীতে নির্মিত, এর কিছু অংশে আর্ট ডেকোর প্রভাব দেখা যায়।

ভারতের প্রেক্ষাপটে

ভারতে মুম্বই (তৎকালীন বম্বে) শহরটি আর্ট ডেকো স্থাপত্যের এক বড় কেন্দ্র। ওখানে বহু ভবন, সিনেমা হল (যেমন – Eros Cinema, Regal Cinema) এই শৈলীতে নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালে মুম্বইয়ের ভিক্টোরিয়ান ও আর্ট ডেকো স্থাপত্যসমূহকে UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version