উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, জয়নগর ও কুলতলি অঞ্চলে আবারও শুরু হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ধান চাষ। প্রায় ৫০ বছর আগে চাষ হওয়া হরিণখুরা, মালাবতী, তালদি, খেজুরচারি, কলাবতী ও কেরালাসুন্দরী প্রজাতির ধান এখন নতুন করে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিমপীঠ শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের গবেষণায় জানা গেছে, এই ধানগুলি লবণসহনশীল এবং সুন্দরবনের জলবায়ুর সাথে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে। এই অঞ্চলের কয়েকশো বিঘা জমিতে ইতিমধ্যেই এই ধান চাষ শুরু হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. চন্দন মণ্ডল জানান, “সুন্দরবনের মাটিতে বিশেষ লবণসহনশীল ধান চাষ করা হচ্ছে। আমাদের কেন্দ্র থেকে এই ধানের বীজের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং এটি চাষিদের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।”
হরিণখুরা ও মালাবতীর বিশেষত্ব
কৃষি বিশেষজ্ঞ শুকদেব সামন্ত জানান, অতীতে সুন্দরবনে হরিণখুরা ও মালাবতী ধান ব্যাপকভাবে চাষ করা হতো। মালাবতী ধানের চাল পান্তা ভাতে খাওয়া যেত পদ ছাড়াই, আর তার ভাতের সুগন্ধ ছিল অতুলনীয়। এই ধান গাছ সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট উচ্চতার হয় এবং প্রতি বিঘায় প্রায় সাত মন ধান উৎপাদিত হয়।
হরিণখুরা ধানের বিশেষত্ব হল এর চালের দু’পাশে হরিণের খুড়ের মতো কালো দাগ। এই ধানের ভাত, চিঁড়ে, মুড়ি ও খই তৈরি করা হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১৩ মন ধান উৎপাদিত হয় এবং এটি চাষে কোনও বড় সমস্যা দেখা যায় না।
চাষিরা কেন এগিয়ে আসছেন?
নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ সোমনাথ সরকার জানিয়েছেন, “এই ধানগুলিতে রোগ-পোকার আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। ফলে চাষিরা এই ধানের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।”
চাষিরা জানান, এই ধানের গুণাগুণ এবং উৎপাদনক্ষমতা একদিকে যেমন লাভজনক, তেমনি স্থানীয় বাজারেও এর চাহিদা রয়েছে। অতিবৃষ্টিতেও এই ধানের চাষে সমস্যা হয় না, বরং জমিতে জল জমলে ধানগাছ বাড়তে থাকে।
সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী ধান চাষ নতুন প্রজন্মের চাষিদের সামনে একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি তুলে ধরেছে। এতে যেমন স্থানীয় কৃষি সংস্কৃতি বাঁচবে, তেমনি পরিবেশের উপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।