২০১৬ সালের এসএসসি শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ বুধবার এই রায় ঘোষণা করে। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারচুপি হয়েছে এবং কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তাই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার নির্দেশ
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। নতুন প্রক্রিয়ায় যারা বাদ যাবেন, তাদের বেতন প্রদান অব্যাহত থাকবে। যাঁরা ২০১৬ সালের এসএসসিতে চাকরি করছিলেন, তারা নতুন নিয়োগে যোগ্যতা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তবে নতুন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক কর্মী বেতন পাবেন বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতির জটিলতা
শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব হয়নি। আসল উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) উদ্ধার না হওয়ায় কোনটি প্রকৃত তা নির্ধারণ করাও কঠিন। এসএসসি জানায়, ‘র্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে, তবে ওএমআর শিটে কারচুপির প্রমাণ নেই।
সিবিআইয়ের তদন্তে দুর্নীতি স্পষ্ট
মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দাবি, এসএসসির নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এমনকি সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছেন অনেকে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, হাই কোর্টের রায় বহাল রাখা উচিত।
রাজ্য সরকারের আপত্তি
অন্যদিকে, রাজ্য সরকার জানায়, এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ছাঁটাই হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
চাকরি বাতিলের পটভূমি
২০১৬ সালে এসএসসির শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাই কোর্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়, যার ফলে ২৫,৭৫৩ জন চাকরি হারান। চাকরিচ্যুতদের মধ্যে অনেকে সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
নতুন পরীক্ষার সম্ভাবনা
প্রধান বিচারপতি খন্না জানাতে চান, নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন হবে। মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, অনেকেই চাকরির আবেদন না করেও নিয়োগ পেয়েছেন। তাই প্রকৃত প্রার্থীদের জন্য নতুন পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ওঠে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এসএসসি নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।