সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অবশেষে ‘দাগি অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। শনিবার সন্ধ্যায় কমিশনের ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশিত হয়। মোট ১৮০৪ জন প্রার্থীর নাম ও রোল নম্বর এতে অন্তর্ভুক্ত। যদিও তালিকা প্রকাশ ঘিরে সারাদিন নাটকীয়তা চলেছে। দুপুরে প্রথমে একটি খসড়া তালিকা সামনে এলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার কমিশন দফতরে গিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন ও আইনি পরামর্শ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ধ্যায় তালিকা প্রকাশ করা হয়।
আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বর এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ‘দাগি অযোগ্য’ প্রার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ গত সপ্তাহে কমিশনকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সাত দিনের মধ্যে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করতে হবে। সেই নির্দেশেই এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।
তবে ১৮০৪ জনের নাম প্রকাশ হলেও তাঁদের পরিচয় ও নিয়োগ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তালিকায় নেই। শুধুমাত্র নাম ও রোল নম্বর দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, “তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা আদৌ প্রার্থী ছিলেন কি না, তাঁরা চাকরিতে ছিলেন কি না, কিছুই স্পষ্ট নয়। সারাদিন নাটক করে অবশেষে ১৮০৪ জনের নাম প্রকাশ করা হল। তবে এর আগে তালিকা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে সরানো হল কেন, তারও ব্যাখ্যা নেই। এত কম সংখ্যক অযোগ্য প্রার্থী কী করে হয়, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
এই তালিকায় উঠে এসেছে একাধিক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের নাম। নিউজ ১৮ বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের পুত্রবধূ শম্পা ঘোষের নাম রয়েছে তালিকার ১২৬৯ নম্বরে। উত্তর চব্বিশ পরগণার নৈহাটির একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তিনি। যদিও ফোনে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি শম্পা ঘোষ।
এছাড়া উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি ও বর্তমানে বিজেপি নেত্রী কবিতা বর্মনের নামও এই তালিকায় রয়েছে। ২০১৬ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। তবে শনিবার অযোগ্য তালিকায় তাঁর নাম প্রকাশ হওয়ার পর তাঁকে আর বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
এসএসসি-র প্রকাশিত তালিকায় রাজনৈতিক পদে থাকা আরও বেশ কিছু মানুষের নাম রয়েছে বলে সূত্রের খবর। বিভিন্ন জেলায়ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়দের নাম প্রকাশিত হওয়ায় তালিকা নিয়ে নানা মহলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এদিকে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের প্রতিনিধি সুমন বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই তালিকা আগে প্রকাশ হলে এত করুণ পরিস্থিতি তৈরি হত না। আমাদের জীবন্ত লাশ হয়ে ঘুরতে হত না। আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব।”
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকাশ হবে টেট ২০২৩-এর ফল, আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর