Homeখবররাজ্যরবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর জন্য‌ কি দায়ী বিধানচন্দ্র

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর জন্য‌ কি দায়ী বিধানচন্দ্র

প্রকাশিত

শৈবাল বিশ্বাস

পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়, প্রভাত মুখোপাধ্যায়, রানি মহলানবিশের লেখাপত্র থেকে জানা যায় রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ডা. নীলরতন সরকার ও ডা. বিধানচন্দ্র রায়। শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথ প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যায় প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন। সেই সময় ডা. সরকারকে অনেকটা উপেক্ষা করে বিধানচন্দ্র অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। ডা. সরকার বারবার বারণ করেছিলেন কিন্তু ডা. রায় শোনেননি। তিনি কবিকে বলেছিলেন, একটু কেটে বাইপাস করে দিলেই আপনার প্রস্রাবের সমস্যায় মিটে যাবে, পায়ের ফোলাও কমে যাবে। এই অস্ত্রোপচার করেছিলেন তৎকালীন যুগের বিশিষ্ট সার্জন ললিত বন্দ্যোপাধ্যায়। সে অস্ত্রোপচার সফল হলেও কবি কোমায় চলে গেলেন। আর তাঁকে বাঁচানো গেল না।

সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের শেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য‌ হাতে এসেছে বাগবাজারের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. পশুপতি ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণের সৌজন্যে। ডা. ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘদিনের চিকিৎসক ছিলেন। কবি শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় এলে ডাঃ ভট্টাচার্য তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর লেখা বাংলা বইয়ের ভূমিকা লিখে দিয়েছন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বই বিশ্বভারতী থেকে ছাপানোরও ব্য‌বস্থা করেছেন। এ হেন ডা. ভট্টাচার্যর স্মৃতিকথা ‘ডাক্তারের দুনিয়া’ থেকে জানা যাচ্ছে, প্রস্টেটের সমস্যার চিকিৎসা সর্ব প্রথম তিনিই শুরু করেন। কিন্তু তাঁর ওষুধে কাজ না হওয়ায় ডা. নীলরতন সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়। ডাঃ সরকার বিদেশ থেকে বহু দামি দামি ওষুধ আনিয়েছিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সে সব খেতেন না। ডা. ভট্টাচার্য মনে করেন, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ওপর বিরাগ থেকেই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ এই সব ওষুধ খেতে চাইতেন না।

রবীন্দ্রনাথ যখন খুবই কষ্ট পাচ্ছেন তখন ডাক্তাররা কী করণীয় তা স্থির করতে শলাপরামর্শ করেছিলেন। ডা. রায় অনেকটা জোর করেই অপারেশনের প্রস্তাব চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এতে নীলরতনের একেবারে সায় ছিল না। তিনি মনে করতেন, রবীন্দ্রনাথের শরীরে অন্য‌ অনেক জটিলতা রয়েছে ফলে অপারেশনের ধকল শরীর নিতে পারবে না। ডা. রায় কারও কথা শোনেননি। জোড়াসাঁকোর একটি দালান জীবাণুমুক্ত করে অস্ত্রোপচার করেন ললিত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন ওঠে এ ভাবে বারান্দায় অস্ত্রোপচার করে তিনি কি ঠিক করেছিলেন? রবীন্দ্রনাথকে কি যথেষ্ট জীবাণুমুক্ত পরিবেশে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল? মনে হয় না। তার কারণ অস্ত্রোপচারের পরেই কবির ধুম জ্বর আসে। তার পর শুরু হয় হেঁচকি। বিধান রায় এত দিন পর্যন্ত প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস বজায় রেখে জোড়াসাঁকোর লোকজনকে বশ করে রেখেছিলেন। কিন্তু হেঁচকি শুরু হতেই তিনি অসহায়ের মতো বাড়ির মেয়েদের বলেন, “তোমরা তো অনেক টোটকা জান। দেখো না যদি গুরুদেবের হেঁচকি বন্ধ করতে পার।” ডা. সরকার কিন্তু একটি কথাও বলেননি। তিনি নীরবে রোগীর অবস্থা দেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

পরে ঘনিষ্ঠমহলে বারবার ডাঃ নীলরতন সরকার বলেছেন, অস্ত্রোপচারটা না হলে বোধহয় কবিকে আরও কিছু দিন ওষুধের ওপর বাঁচিয়ে রাখা যেত। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, বিধান রায় তাঁর চিকিৎসকপ্রতীম সেই যুগপুরুষ বিজ্ঞানী ডা. সরকারের উপদেশ অগ্রাহ্য‌ করলেন কেন? শুধু ক্রেডিট পাওয়ার আশায়? কেনই বা রবীন্দ্রনাথের ব্য‌ক্তিগত চিকিৎসক পশুপতি ভট্টাচার্যকে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছিল না? চিকিৎসক হিসাবে ডা. রায়ের অপরিসীম অজ্ঞতার বেলুন ফুটো হয়ে যাওয়ার ভয়ে?

আরও সাক্ষ্য‌প্রমাণ মিললে নিশ্চিত ভাবে সব কিছু বলা সম্ভব। কিন্তু এখন অন্তত এটুকু বলা যায়, ডা. রায়ের জন্য‌ই রবীন্দ্রনাথকে শেষকালে অপরিসীম যন্ত্রণা পেতে হয়েছে।

প্রতিবেদনটি পুন:প্রকাশিত।

ডা. বিধানচন্দ্র রায় সম্পর্কিত অন্য প্রতিবেদনগুলি পড়ুন এখানে: ডা. বিধানচন্দ্র রায়

আপনার প্রশ্ন, আমাদের উত্তর

সাম্প্রতিকতম

বাঘশুমারির কারণে ১১ ও ১২ ডিসেম্বর বন্ধ থাকছে সুন্দরবনের জলপথ ভ্রমণ

ডিসেম্বরের ১১ ও ১২ তারিখ সুন্দরবনে বন্ধ থাকছে জলপথে পর্যটন। বাঘশুমারির প্রথম পর্যায়ের কাজ চলবে এই দুই দিনে। পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে টাইগার রিজ়ার্ভ কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বজয়ী রিচা ঘোষকে সংবর্ধনা সিএবি-র, মুখ্যমন্ত্রী দিলেন ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ-এর নিয়োগপত্র

খবর অনলাইন ডেস্ক: শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলার প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষকে সংবর্ধনা দিল...

সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার ব্যক্তি স্বাধীনতা, পরিবার বা সম্প্রদায় কেউই বাধা দিতে পারে না, বলল দিল্লি হাইকোর্ট

দিল্লি হাইকোর্টের স্পষ্ট বার্তা— প্রাপ্তবয়স্ক দুই ব্যক্তির সম্পর্কে পরিবার বা সমাজের হস্তক্ষেপ আইনত অবৈধ। সঙ্গী বেছে নেওয়া ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার সাংবিধানিক অধিকার।

দিল্লির বাতাস মানে সাতটি সিগারেট প্রতিদিন! সাবেক এমস অধিকর্তা ড. রণদীপ গুলেরিয়ার সতর্কবার্তা

খবর অনলাইন ডেস্ক: দিল্লির বাতাসের গুণমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স, AQI) আবার ‘অতিমাত্রায় বিপজ্জনক’...

আরও পড়ুন

হেমন্তেই শিরশিরানি বাতাস! দক্ষিণবঙ্গে পারদ নামার ইঙ্গিত, উত্তরবঙ্গে কুয়াশার সতর্কতা

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস— দক্ষিণবঙ্গে নামবে তাপমাত্রা, উত্তরবঙ্গে কুয়াশার সতর্কতা। হেমন্তের সকালে বাড়ছে শীতের আমেজ, আসছে শীতের বার্তা।

সারা রাজ্যে এসআইআর ফর্ম বিতরণ ৩ কোটি ছাড়াল , এখনও শুরু হয়নি অনলাইন ফিল-আপ, উদ্বেগে পরিযায়ীরা

রাজ্যে তিন কোটিরও বেশি এসআইআর ফর্ম বিতরণ হয়েছে। কিন্তু এখনও শুরু হয়নি অনলাইন ফর্ম ফিল-আপ প্রক্রিয়া। কমিশনের দাবি, ডিজিটাল স্বাক্ষরের জটিলতা কাটাতে সময় নিচ্ছে তারা।

বিএলও বা বিএলএ-দের হাতে এসআইআর-এর নথি নয়! বিভ্রান্তি কাটাতে জানিয়ে দিল কমিশন

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশ। বিএলও-দের হাতে কোনও নথি দেওয়ার দরকার নেই। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্ণ সময় কাজ করবেন ডিইও, ইআরও ও বিএলওরা।