রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরকে অবিলম্বে ‘স্বাধীন দফতর’ হিসেবে ঘোষণা করতে নির্দেশ দিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের অধস্তন সচিব এম আশুতোষের তরফে।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, বর্তমানে সিইও-র দফতর রাজ্য সরকারের অর্থ, স্বরাষ্ট্র এবং পার্বত্য দফতরের অধীনস্ত থেকে কাজ করছে, যার ফলে ওই দফতরের যথাযথ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা নেই। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে স্বশাসিত পরিকাঠামো গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চিঠিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অতিরিক্ত মুখ্যসচিব স্তরের হলেও, তিনি যেন কোনওভাবেই রাজ্যের মুখ্যসচিব বা প্রিন্সিপাল সচিবের নিয়ন্ত্রণাধীন না থাকেন। এছাড়া সিইও দফতরকে রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো থেকে আলাদা করে ‘সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতি আরও মজবুত করতে সিইও দফতরে উপ, অতিরিক্ত ও যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক পদে চারটি নিয়োগ দ্রুত পূরণের বার্তাও পাঠিয়েছে কমিশন।
এই নির্দেশ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ তৈরি করেছে। কারণ বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্কে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গেও বিহারের মতো ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কমিশন।
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, রাজ্যে অনুপ্রবেশের কারণে জনবিন্যাসের চরিত্র বদলেছে। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে এসআইআর বা ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’-র দাবি জানিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই সিইও-র দফতরে সাক্ষাৎ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের তরফে স্বাধীনতা ঘোষণার নির্দেশ রাজ্যের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা আরও জোরদার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর একটি সাংবিধানিক সংস্থা। তা কোনও রাজ্য সরকারের দফতরের অধীনস্থ থাকতে পারে না। তবে নির্বাচন পরিচালনায় রাজ্য সরকারের সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ থেকেই যায়।
আরও পড়ুন: রাজ্যে এনআরসি কার্যকরের দাবি, কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা