কলকাতা: রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে। তিন শতাংশ মহার্ঘভাতা (ডিএ) বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সঙ্গে রইল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড, বার্ধক্য ভাতা-সহ একাধিক ইস্যুতে বড়োসড়ো ঘোষণা।
ডিএ বৃদ্ধি
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এবং অবসরপ্রাপ্তদের তিন শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো হল। যা ২০২৩ সালের মার্চ থেকে কার্যকর হবে। আপাতত রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় তিন শতাংশ ডিএ পান। নয়া ঘোষণার ফলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ছয় শতাংশ ডিএ পাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমরা চেষ্টা করেছি উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আর্থিক অনেক অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ষষ্ঠ পে কমিশন তৈরি করেছিল সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। আমাদের কর্মীরা ১০ বছরে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ব্যাঙ্কক, ভুটান, বাংলাদেশ যেতে পারেন। সেই সব সুযোগ-সুবিধা আছে”।
ব্যাপক কর্মসংস্থান
শিল্পে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে জোর দিয়েছে রাজ্য। যা কর্মক্ষেত্রে খানিকটা আলো দেখাল বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল। বানতলা চর্মনগরী, হাওড়া, হলদিয়া-ডানকুনি-রঘুনাথপুর-কল্যাণীর মতো শিল্প হাবে বিনিয়োগ টানতে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় জানান অর্থমন্ত্রী। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বানতলা লেদার কমপ্লেক্সে ইতিমধ্যে ৩ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। আরও আড়াই লক্ষ কর্মসংস্থান হবে এখানে। অন্যদিকে, হলদিয়া-ডানকুনি-রঘুনাথপুর-কল্যাণী এই শিল্প হাবগুলিতে সংযোগকারী করিডর তৈরি হবে। তাতে আশেপাশের এলাকায় প্রচুর অনুসারী শিল্প তৈরি হবে। তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকছে। এছাড়া পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ‘জঙ্গল সুন্দরী’ ৭২ কোটি টাকার বিনিয়োগ করে দেড় লক্ষ চাকরি সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্যের অন্যতম বড় শিল্প সংস্থান হতে চলেছে দেউচা-পাচামি কয়লা খনি। সেই কাজ সন্তোষজনক ভাবে এগোচ্ছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। দেউচা-পাচামিতে কাজ শুরু হলে দেড় লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হবে।
স্ট্যাম্প ডিউটি
স্ট্যাম্প ডিউটির উপর ছাড় নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। আজ বাজেট পেশের সময় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানান, স্ট্যাপ ডিউটির ছাড় মিলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। স্ট্যাম্প ডিউটির ২ শতাংশ এবং জমি–বাড়ির বাজার মূল্যের সার্কেল রেটের ১০ শতাংশ ছাড় মিলবে এই সময়কালে। আগে এই সুবিধা চলতি আর্থিক বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা ছিল। এই সুবিধার ফলে জমি–বাড়ি কেনায় অনেকটা অর্থ সাশ্রয় হবে আম জনতার।
ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড
রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য বিরাট ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এই নতুন প্রকল্পের আওতায় ১৮ থেকে ৪৫ বছরের যুবক-যুবতীদের এককালীন ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করবে রাজ্য। রাজ্যের মোট ২ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী এই প্রকল্পে উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, যুব প্রজন্মের জন্য ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। ১৮ বছর থেকে ৪৫ বছর থেকে যুবক-যুবতীরা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দিতে পারবেন। তার ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এই খাতে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার
রাজ্যের মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একের পর এক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য় সরকার। মহিলাদের জন্য় চালু হয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। এই প্রকল্পে তফসিলি জাতি-উপজাতির মহিলাদের জন্য় মাসিক ১০০০ টাকা ও অন্যান্য মহিলাদের জন্য় ৫০০ টাকা পেতেন। তবে এই ভাতা পেতেন ২৫-৬০ বছর বয়সিরা। এবার সেই প্রকল্পের আওতায় এলেন যাটোর্ধ্ব মহিলারাও। এতদিন ৬০ বছর পেরিয়ে গেলে তাঁরা পেতেন বার্ধক্য ভাতা। এবার ষাটোর্ধ্ব মহিলারা বার্ধক্য ভাতা-সহ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে মাসে ১ হাজার টাকা পাবেন।
মৎস্যজীবী বন্ধু
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি মৎস্যজীবীদের জন্য নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। নাম ‘মৎস্যজীবী বন্ধু’। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি মৎস্যজীবীদের স্বাভাবিক বা অকালমৃত্যুতে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের এককালীন ২ লক্ষ টাকা অর্থ সাহায্য করা হবে। এই খাতে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: বুধবার ১৫ ডিগ্রির ঘরে, ৪-৫ দিনের মধ্যে চড়বে তাপমাত্রার পারদ