শ্রয়ণ সেন
যতই হাহাকার করুন না কেন, গরমকালে গরমই পড়া দরকার। এ বছর মার্চ মাস স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা ছিল। এমনকি মার্চের শেষ দিকে একদিন তো কলকাতায় গরমজামা চাপাতে হয়েছিল, এত ঠান্ডা পড়ে গিয়েছিল। সেটা কিন্তু আদৌ ভালো লক্ষণ ছিল না। বরং মানুষের রোগভোগ বাড়িয়ে দেওয়ার আদর্শ আবহাওয়া হয়ে উঠেছিল।
কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের অবস্থান ক্রান্তীয় বলয়ের মধ্যে। উত্তর গোলার্ধের কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে যে অঞ্চলটি পড়ে, সেটিকে ক্রান্তীয় বলয় বলা হয়। ক্রান্তীয় বলয়ের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে বছরে একটি সময় আসে যখন সূর্য সরকারি ভাবে অবস্থান করে, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসটাই সেই সময়।
গরম আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এপ্রিল-মে মাসে এই রকম আবহাওয়াই আমরা দেখে এসেছি। এমনকি কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গ ইদানীং যে গরম পড়ছে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি গরম পড়েছে ১৯৫৮ এবং ১৯৭২ সালে।
বস্তুত, বর্তমান যুগে বাতানুকুল যন্ত্রের ওপরে অতি নির্ভরশীলতা আমাদের গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার শক্তি কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে একটু গরম বাড়লেই ত্রাহি ত্রাহি রব উঠছে।
অস্বীকার করার জায়গা নেই যে গরমে সমস্যা অনেক। মাঠঘাট খটখটে হয়ে যায়, জলস্তর নেমে যায়, খালবিল, পুকুর সব শুকিয়ে যায়। তবুও গরম পড়া দরকার। কারণ যখন যেটা পড়া দরকার, সেটা পড়লে মানুষের রোগভোগ কম হয়। জ্বরজালা এড়ানো যায়।
আর যদি বলেন গরম মানে হিটস্ট্রোকের আশংকা, তা হলে আমি বলব একটু নিজের জীবনের প্রতি যত্ন নিলেই এগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বেশি করে জল খাওয়া, তৈলাক্ত খাবার কম খেয়ে পেট ঠান্ডা রাখে এমন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, খুব প্রয়োজন না থাকলে দিনের বেলায় কয়েক ঘণ্টা কড়া রোদের মধ্যে না থাকলেও আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবেন।
এ বার আসি গরম পড়া কেন দরকার, সেই ব্যাখ্যায়। সাধারণ মানুষের দাবি হল ‘গরম চাই না বৃষ্টি চাই।’ কিন্তু জানেন কি আমাদের এই অঞ্চলে ভালো করে গরম না পড়লে গুছিয়ে ঝড়বৃষ্টিই হবে না।
এইটা বোঝানোর জন্য একটা সহজ অংক করা যাক।
গরম যত বাড়বে = মাটি তপ্ত হবে
মাটি তপ্ত হবে = বায়ুচাপ কমবে।
বায়ুচাপ কমবে = স্থানীয় ভাবে নিম্নচাপ তৈরি হবে
সেই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে দখিনা বাতাস আর উত্তুরে বাতাস ছুটে আসবে
বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহ এক জায়গায় আসবে = কালবৈশাখীর অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।
তবে তার জন্য দক্ষিণবঙ্গের বায়ুমণ্ডলে শুকনো উত্তুরে হাওয়া নয়, বরং জলীয় বাষ্পে ভরা, আর্দ্র, ঘেমো বাতাসের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, এপ্রিলের ৭ তারিখ পর্যন্ত দুরন্ত গরম পড়েছিল বলে তার পর কিছুটা ঝড়বৃষ্টি পায় দক্ষিণবঙ্গ। কিন্তু তার পর সে ভাবে গরম পড়েনি। মেঘলা আবহাওয়া ছিল মূলত যা ঝড়বৃষ্টি নিয়ে আসার জন্য অনুকূল নয়।
আপাতত আগামী কয়েক দিন গরমই বাড়বে, যেটা কাম্য। কলকাতায় পারদ ৪০ হয়তো ছোঁবে না, কিন্তু কাছাকাছি থাকবে। আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গে জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস নয়, বরং পশ্চিম দিক থেকে আসা শুকনো বাতাসই বইবে। সেই কারণে ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন