কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগাগোড়া উপস্থিতিতে শুক্রবার পালিত হল রেড রোড দুর্গাপুজো কার্নিভাল। কলকাতার ৯৬টি পুজো কমিটি যোগ দেয় ওই কার্নিভালে। প্রত্যেক পুজো কমিটি দু’ মিনিট করে পারফর্ম করে শোভাযাত্রা সহকারে চলে যায় নিরঞ্জনে। দু’ মিনিটের পারফরম্যান্সে ছিল নানা ধরনের নৃত্য। টলিউডের সেলিব্রিটিরাও কার্নিভালে উপস্থিত ছিলেন।
কার্নিভালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীকে একবার কার্নিভালে অংশগ্রহণকারী নৃত্যশিল্পীদের তালে তাল মেলাতেও দেখা গেল। তবে পায়ের ব্যথার কারণে তিনি বেশির ভাগ সময় বসেই ছিলেন।
কার্নিভাল অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, টালা প্রত্যয় এবং চালতাবাগান সর্বজনীনের প্রতিমা আলিপুর জেল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত করে রেখে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন।
বিদেশ সফর সেরে ফেরার পর থেকেই পায়ে ব্যথার কারণে মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটের বাড়িতেই রয়েছেন। বাড়ি থেকে বার হননি। বাড়িতে বসেই সারছেন কাজ। বাড়ি থেকে বার হচ্ছেন না বলেই এ বার শহরের বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধনও সেরেছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। শুক্রবার কার্নিভালে যোগ দিতেই তিনি দীর্ঘ দিন পর বাড়ি থেকে বেরোলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসেছিলেন মূল মঞ্চে। অল্প সময়ের জন্য এক বার নৃত্যশিল্পীদের নাচের ছন্দে পা মেলালেন। অন্য বার রেড রোডে ধরে হেঁটে উপস্থিত দর্শকদের স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ বার আর তা করতে পারেননি। অল্প হেঁটে ভিআইপি অতিথিদের ব্লক পেরিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসেন তিনি।
রেড রোডের দু’ ধারে কার্নিভালের অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রায় ১৮ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ দিন পুরো দর্শকাসন ছিল পরিপূর্ণ। এ বারের কার্নিভাল অনুষ্ঠানে ছিলেন বিদেশি অতিথিরাও। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিভিন্ন দেশের ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদূতদের প্রতিনিধিদেরও। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ইউনেস্কোকেও।
মঙ্গলবার বিজয়া দশমী শেষ হতে না হতেই কার্নিভালের চূড়ান্ত তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। পূর্ত দফতরের উদ্যোগে তৈরি হয় অস্থায়ী গ্যালারি এবং চেয়ারের দর্শকাসন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে পুজো কমিটিগুলিকে রেড রোডের কাছাকাছি আসতে বলা হয়। প্রতিটি পুজো সর্বাধিক তিনটি ট্রেলার বা ট্যাবলো নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পায়।
বিগত কয়েক বছর ধরেই কলকাতার রেড রোডে এই কার্নিভালের আয়োজন করে আসছে রাজ্য সরকার। প্রতি বারের মতো এ বারেও বহু মানুষ পুজো কার্নিভাল দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন। রেড রোড জুড়ে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কার্নিভাল দেখে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের যাতে কোনো রকম অসুবিধা না হয় তার জন্য ছিল বিশেষ পরিবহণ পরিষেবা।
রাজ্য পরিবহণ নিগম ওই দিন এসপ্ল্যানেড থেকে বিভিন্ন রুটে ২৩টি বিশেষ বাস চালান। মধ্যরাত পর্যন্ত মেলে বাস পরিষেবা। এসপ্ল্যানেড-গড়িয়া, এসপ্ল্যানেড-নিউ টাউন, এসপ্ল্যানেড-ডানলপ, এসপ্ল্যানেড-পাটুলি, এসপ্ল্যানেড-যাদবপুর ও বিমানবন্দর-নবান্ন-সহ বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত বাস চালানো হয়।
এ ছাড়া মেট্রো পরিষেবার সময় বাড়ানো হয়। শুক্রবার দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষগামী শেষ মেট্রো ছাড়ে রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে। দমদম থেকে কবি সুভাষগামী এবং কবি সুভাষ থেকে দমদমগামী শেষ মেট্রো ছাড়ে রাত ১১টা ১০ মিনিটে।
ছবি: রাজীব বসু
আরও পড়ুন
শনিবার মুখোমুখি বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস, ইউনিসেফের উদ্যোগে ইডেনে এক অভিনব অনুশীলনে সাকিবরা