শারদোৎসবের জন্য সেজে উঠেছে বাংলা। দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে বাঙালি আজ গ্লোবাল সিটিজেন। থিমের অভিনবত্বই হোক কিংবা সাবেকি পুজোর আভিজাত্য ও জৌলুস, চাকচিক্য-পুজোর ষোলআনা আমেজকে ভরপুর আনন্দে চেটেপুটে নিতে প্রস্তুত আট থেকে আশি, সকলেই। প্রতি বছরই থিমের অভিনবত্বে নজর কাড়ে দমদম পার্ক তরুণ সংঘ। এ বছর তাদের থিম ‘মুক্তধারা’ – “আমাকে যে বাঁধবে ধরে এই হবে যার সাধন,/ সে কি অমনি হবে?/ আমার কাছে পড়লে বাঁধা সেই হবে মোর বাঁধন,/ সে কি অমনি হবে?”
‘মুক্তধারা’ নাটকে বৈরাগী ধনঞ্জয়ের মুখে এই গান দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বেজেছিল ‘ভৈরব’-এর তাণ্ডবধ্বনি। যে তাণ্ডবের সামনে যন্ত্ররাজ বিভূতির বাঁধ বিকল হয়ে পড়ে। রবি ঠাকুরের কথায়, “ভাঙনের যিনি দেবতা… তাঁর জন্য যেসব ছিদ্রপথ থাকে সে কারও চোখে পড়ে না।” ভাঙনের যে দেবতা, তিনিই তো সকল মুক্তির আধার। ভৈরবের তাণ্ডবের ধ্বনিতেই তাই বেজে ওঠে স্রোতের মুক্তির গান। বিস্মিত হন রাজা। প্রশ্ন করেন, ‘এ কী কাণ্ড!’ বৈরাগী ধনঞ্জয় জানান, ‘বাঁধ ভাঙার উৎসবে ডাক পড়েছে।’ ধ্বংসলীলার মধ্যেও উৎসবের ডাক আসে, প্রকৃতির পথে শামিল হন প্রতিটা মানুষও।

দমদম পার্ক তরুণ সংঘের থিম প্রসঙ্গে শিল্পী অনির্বাণ দাস বলেন, “রূপকের আড়ালে ‘মুক্তধারা’ নাটক অনেক কথাই বলে যায়। তবে নদীবাঁধের যে সংকট, তা কি শুধুই রূপক? অন্তত গত ১০০ বছরে পৃথিবীর দিকে তাকালে সংশয় জাগে বই-কি! একের পর এক বাঁধ যখন বিকল হয়ে পড়ছে, ভেঙে পড়ছে নদীর স্রোতের সামনে – তখন সেই তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই নেই কারওরই। এক-একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের। কোথাও আবার সংখ্যাটা কয়েক লাখ। তবে দুর্ঘটনা বললেই কি সবটুকু বলা হয়? নাকি প্রকৃতিকে বাঁধতে চাওয়ার অনিবার্য পরিণতি এমনই? কয়েক বছর আগেই বিশ্বভ্রমণে জাপান, জার্মানি, ইতালিতে নগরসভ্যতার সেই অনিবার্য পরিণতিকেই হয়তো প্রত্যক্ষ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।”
অনির্বাণের কথায়, “সৃষ্টি রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে আছে মানুষের অস্তিত্বও। পঞ্চভূতেই সৃষ্টি, পঞ্চভূতেই সমস্তকিছুর লয়। ‘মুক্তধারা’-র যুবরাজকেও তাই আমরা পাই ঝর্ণাতলে পরিত্যক্ত এক শিশুর রূপে। সেই ঝর্ণার স্রোতেই আবার মিলিয়ে যান তিনি। সেই ‘অক্ষিত, অচ্যুত’ প্রকৃতিকে বেঁধে রাখার সাধ্য কার আছে?’
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘মুক্তধারা’ নাটকে যে রূপক পরিস্ফুট করেছেন, সেই রূপককে আশ্রয় করে এ বছর দমদম পার্ক তরুণ সংঘে দুর্গাপূজার থিমে তুলে ধরা হয়েছে নদীবাঁধ সংকটের কথা।
কোথায় এই মণ্ডপ
উল্টোডাঙা মোড় থেকে নজরুল ইসলাম সরণি (ভিআইপি রোড) ধরে এগোলে লেকটাউন, বাঙ্গুর ছাড়িয়ে দমদম পার্ক। সেখান থেকে বাঁদিকে দমদম পার্ক রোড ধরে সোজা এগিয়ে গেলেই পড়বে দমদম পার্ক তরুণ সংঘের পূজামণ্ডপ।