পাকিস্তান: ৫৫৬ (শান মাসুদ ১৫১, সলমন আঘা ১০৪, আবদুল্লা সফিক ১০২, জ্যাক লিচ ৩-১৬০, ব্রাইডন কার্স ২-৭৪), ২২০ (সলমন আঘা ৬৩, আমের জামাল ৫৫, জ্যাক লিচ ৪-৩০, গাস অ্যাটকিনসন ২-৪৬)
ইংল্যান্ড: ৮২৩-৭ (হ্যারি ব্রুক ৩১৭, জো রুট ২৬২, সাইম আয়ুব ২-১০১, নসিম শাহ ২-১৫৭)
মূলতান (পাকিস্তান): এই প্রথম ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ঘটনা ঘটল। যেটা অচিন্তনীয় সেটাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে গেল। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পাকিস্তানই প্রথম দল যারা প্রথম ইনিংসে ৫০০-র বেশি রান করেও ইনিংসে হেরে গেল। সঙ্গে আর-একটি রেকর্ড হল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বল করতে গিয়ে পাকিস্তানের ছ’জন বোলার সেঞ্চুরি করলেন। এই সেঞ্চুরি ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি নয়, এই সেঞ্চুরি বল হাতে সেঞ্চুরি। অর্থাৎ ছ’জন পাক বোলার ১০০-রও বেশি করে রান দিলেন। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান দিলেন আবরার আহমেদ – ১৭৪ রান। কিন্তু দুর্ভাগ্য আবরারের। এত রান দিয়েও একটিও উইকেট পেলেন না।
পাকিস্তানকে ১ ইনিংস ও ৪৭ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০ ফলে এগিয়ে গেল। পাকিস্তানের মূলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনের সকালেই ম্যাচের ফয়সালা হয়ে গেল। ৩১৭ রান করে ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন হ্যারি ব্রুক। ব্রুক সঙ্গী হিসাবে পেয়েছিলেন জো রুটকে। তাঁরা দু’জনে মিলে চতুর্থ উইকেটের জুটিতে ৪৫৪ রান করে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। রুট করলেন ২৬২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের পতন ডেকে আনলেন ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচ ৪ উইকেট দখল করে। অর্ধশত রান করে সলমন আঘা এবং আমের জামাল চেষ্টা করলেন ইনিংস হার এড়ানোর, কিন্তু পারলেন না।
পাকিস্তানের ইনিংসে তিনজনের সেঞ্চুরি
টসে জিতে পাকিস্তান ব্যাট নিয়েছিল এবং খুবই ভালো খেলে ৫৫৬ রান করে। তিন ব্যাটার সেঞ্চুরি করলেন – শান মাসুদ (১৫১), সলমন আঘা (১০৪) এবং আবদুল্লা সফিক (১০২)। এ ছাড়াও ভালো ব্যাট করেন সাউদ শকিল। তিনি মাত্র ১৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন। ইংল্যান্ডের গাস অ্যাটকিনসন পাকিস্তানের প্রথম উইকেট ৮ রানের তুলে নিলেও আবদুল্লা সফিক এবং শান মাসুদ দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে ২৫৩ রান যোগ করেন। মাত্র ২ রানের ব্যবধানে দুই শতরানকারী ব্যাটার আউট হয়ে যান। এরপর বাবর আজমের সঙ্গে জুটি বেঁধে চতুর্থ উইকেটে ৬১ রান যোগ করেন সাউদ শকিল। শেষ পর্যন্ত শকিল এবং সলমন আঘার ব্যাটে ভর করে পাকিস্তান পৌঁছে যায় ৫৫৬-য়। ইংল্যান্ডের ছয় বোলার পাকিস্তানের উইকেটগুলো ভাগ করে নেন। তবে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসেও সবচেয়ে সফল বোলার লিচ ১৬০ রান দিয়ে ৩ উইকেট দখল করেন।

ইংল্যান্ডের দুই সফলতম ব্যাটার জো রুট এবং হ্যারি ব্রুক। ছবি ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড রান জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের
প্রথম উইকেট ৪ রানের মাথায় পড়ে যাওয়ার পর ইংল্যান্ড ছেলেখেলা করল পাকিস্তানের বোলারদের নিয়ে। ইংল্যান্ডের অন্যতম ওপেনার ওলি পোপকে আউট করেন নসিম শাহ। এর পরই ইংল্যান্ডের ব্যাটে মার মার কাট কাট। প্রথম উইকেটের জুটিতে জ্যাক ক্রলি এবং জো রুট যোগ করেন ১০৭ রান। মাত্র ২২ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন ক্রলি (৭৮)। এর পর তৃতীয় উইকেটের জুটিতে রুট এবং বেন ডাকেট যোগ করেন ১৩৬ রান। মাত্র ১৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করে ডাকেট (৮৪) আউট হয়ে গেলে রুটের সঙ্গী হন হ্যারি ব্রুক।
এর পরেই ঝড় ওঠে ইংল্যান্ডের ব্যাটে। আর সেই ঝড়ে উড়ে যান পাকিস্তানের বোলাররা। তাঁদের তুলোধোনা করে রুট ও ব্রুক টেস্ট ক্রিকেটের ইত্তিহাসে রেকর্ড গড়েন। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে রেকর্ড রান যোগ করেন তাঁরা। আজ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটের জুটিতে এত রান কখনও ওঠেনি। তাঁরা যোগ করেন ৪৫৪ রান। ৩৭৫ বলে ২৬২ রান করে রুট আউট হওয়ার পর ব্রুকের সঙ্গী হন জেমি স্মিথ। ঝড় চালিয়ে যান ব্রুক। শেষ পর্যন্ত ৩২২ বলে ৩১৭ রান করেন হ্যারি ব্রুক। আর ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে ৮২৩ রান করে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে। তারা এগিয়ে থাকে ২৬৭ রানে।
নির্বিষ পিচে গুটিয়ে গেল পাকিস্তান
ম্যাচ অমীমাংসিত রাখার যথেষ্ট সুযোগ ছিল পাকিস্তানের। গত চার দিনে যে নির্বিষ পিচে দুটি দলই ব্যাটে ঝড় তুলল সেই পিচে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান এভাবে আত্মসমর্পণ করবে তা কার্যত কেউই ভাবতে পারেনি। কিন্তু সেই ভাবনাই সত্যি হল। পাকিস্তান গুটিয়ে গেল মাত্র ২২০ রানে। ইংল্যান্ডের স্পিন বা ফাস্ট বল, কোনোটারই মোকাবিলা করতে পারলেন না পাকিস্তানের ব্যাটাররা। তবে তারই মধ্যে বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন জ্যাক লিচ। লিচের ঘূর্ণি বলের কাছে হার মানল পাকিস্তান। একমাত্র সলমন আঘা (৬৩) এবং আমের জামাল (৫৫) কিছুটা চেষ্টা করলেন ইংল্যান্ডকে আবার ব্যাট হাতে নামানোর। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হল না। পাকিস্তান ২২০ রানে ইনিংস শেষ করে ইংল্যান্ডকে জিতিয়ে দিল ১ ইনিংস ৪৭ রানে।