অস্ট্রেলিয়া: ৩৩৮ (৪৯.৫ ওভার) (ফোবে লিচফিল্ড ১১৯, এলিসে পেরি ৭৭, অ্যাশলে গার্ডনার ৬৩, শ্রী চরনি ২-৪৯, দীপ্তি শর্মা ২-৭৩)
ভারত: ৩৪১-৫ (৪৮.৩ ওভার) (জেমিমা রড্রিগুয়েজ ১২৭ নট আউট, হরমনপ্রীত কৌর ৮৯, রিচা ঘোষ ২৬, কিম গার্থ ২-৪৬, আনাবেল সাদারল্যান্ড ২-৬৯)
খবর অনলাইন ডেস্ক: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। আট বছর আগে যাদের কাছে হারার পরে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে আর কোনো ম্যাচে হারেনি, সেই তাদের কাছেই আবার হারল। ২০১৭ সালের একদিনের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে শেষ বার হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। আর হেরেছিল এই ভারতের কাছেই। তার পর বিশ্বকাপে আর হারেনি তারা। আট বছর পর তাদের জয়রথ আবার থামিয়ে দিল ভারত।
অসাধ্যসাধন করলেন হরমনপ্রীতেরা। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যখন ৩৩৮-এ রানে পৌঁছে গেল, তখন সবাই ভেবেই নিয়েছিল, এই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া ভারতের পক্ষে অসম্ভব। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন স্মৃতি-জেমিমা-হরমনপ্রীত-রিচা-আমনজোতরা। সেই সঙ্গে ইতিহাসও গড়ল ভারত, মহিলাদের একদিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক রান তাড়া করে জয়। রবিবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্ব পাবে মহিলাদের একদিনের ক্রিকেটে নতুন চ্যাম্পিয়ন।

এক বিরল দৃশ্য। মহিলা ক্রিকেতে মাঠভর্তি দর্শক। ভারতের জয়ে তাদের উল্লাস। ছবি BCCI Women ‘X’ থেকে নেওয়া।
লিচফিল্ডের দুরন্ত সেঞ্চুরি, সঙ্গী পেরি-গার্ডনার
বৃহস্পতিবার নবি মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে আয়োজিত সেমিফাইনালে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় অস্ট্রেলিয়া। দলের ২৫ রানে অধিনায়ক অ্যালিসা হেইলি (১৫ বলে ৫ রান) ক্রান্তি গৌড়ের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেও খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন ফোবে লিচফিল্ড এবং এলিসে পেরি। ঝড়ের গতিতে খেলতে থাকেন তাঁরা। দ্বিতীয় উইকেটে ২২.১ ওভারে তাঁরা যোগ করেন ১৫৫ রান। ২৭.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যায় ১৮০ রানে। তখনই বোঝা গিয়েছিল রানের পাহাড় গড়বে অস্ট্রেলিয়া।
৯৩ বলে ১১৯ রান করে আমনজোত কৌরের শিকার হয়ে লিচফিল্ড ফিরে যাওয়ার পরে তৃতীয় উইকেটে বেথ মুনিকে (২২ বলে ২৪ রান) সঙ্গে নিয়ে ৪০ রান যোগ করেন পেরি। দলের ২২০ রানে শ্রী চরনির বলে জেমিমা রড্রিগুয়েজকে ক্যাচ দিয়ে মুনি বিদায় নেওয়ার পর ৪৫ রানের মধ্যে আরও ৩টি উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। বিদায় নেন পেরিও, ৮৮ বলে ৭৭ রান করে রাধা যাদবের বলে বোল্ড হয়ে। বাকি কাজটা সমাধা করেন অ্যাশলে গার্ডনার। কিম গার্থকে সঙ্গে নিয়ে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ৬৬ রান। দুর্ভাগ্য গার্ডনারের। দলের ৩৩১ রানের মাথায় রান আউট হয়ে যান ব্যক্তিগত ৬৩ রানে (৪৫ বলে)। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারের ১ বল বাকি থাকতে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শেষ করে ৩৩৮ রানে।
জয়ের ভিত গড়ল জেমিমা-হরমনপ্রীতের জুটি। ছবি BCCI Women ‘X’ থেকে নেওয়া।
জয় এনে দিলেন জেমিমা-হরমনপ্রীত
৩৩৯ রান তাড়া করে জেতাটা সহজ নয়, বিশেষ করে মহিলাদের একদিনের ক্রিকেটে এই রান তাড়া করে কেউ আগে জেতেনি। আগের ম্যাচে জখম প্রতীকা রাওয়ালের পরিবর্তে এ দিন স্মৃতি মন্ধানার সঙ্গে ওপেন করেন শেফালি বর্মা। কিন্তু তিনি ১০ রান করে কিম গার্থের বলে এলবিডব্লিউ হন। দলের ১৩ রানের মাথায় প্রথম উইকেট পড়তে স্মৃতির সঙ্গী হন জেমিমা। দলের ৫৯ রানে স্মৃতি (২৪ বলে ২৪ রান) ফিরে যান। গার্থের লেগ সাইডের বল মারতে গিয়ে আউট হন। রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদল করেন।
৯.২ ওভারে ২ উইকেটে ৫৯। কেউ ভারতের জয়ের আশা দেখেননি। কিন্তু হরমনপ্রীত-জেমিমা পরিকল্পনামাফিক খেললেন। শুরুতে কয়েক ওভার ধরে খেললেন, তার পর ধীরে ধীরে হাত খোলা শুরু করেন। তবে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন জেমিমা। এই জেমিমা চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে একটি ম্যাচে বাদও পড়েছিলেন। সেই জেমিমাই শতরান করে ভারতকে ফাইনালে তুললেন। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের রান তোলার গতি প্রায় সমান ছিল। হরমনপ্রীত আর জেমিমা, দু’জনেই শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যাক্তিগত ৮৯ রানের (৮৮ বল) মাথায় সাদারল্যান্ডের বলে বড় শট মারতে গিয়ে গার্ডনারকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন হরমনপ্রীত।
ম্যাচশেষে আবেগতাড়িত জেমিমা। হাতজোড় করে। ছবি BCCI Women ‘X’ থেকে নেওয়া।
জেমিমার সঙ্গে জুটি বাঁধেন দীপ্তি। বড়ো শট মারার দায়িত্ব নেন তিনি। তবে দুর্ভাগ্য তাঁর। ২৪ রানের মাথায় রান আউট হয়ে যান। ছ’নম্বরে নেমে বাংলার রিচা ঘোষও দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন। দু’টি চার ও দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। ১৬ বলে ২৬ রান করে সাদারল্যান্ডের বলে গার্থকে ক্যাচ দিয়ে রিচা যখন ফিরে যান, ততক্ষণে ভারত জয়ের দোরগোড়ায়। জেমিমার সঙ্গে বাকি কাজটা সমাধা করেন আমনজোত। ৯ বলে বাকি থাকতে দলকে পৌঁছে দেন জয়ে। ১৩৪ বলে ১২৭ রান করে জেমিমা এবং ৮ বলে ১৫ রান করে আমনজোত নট আউট থাকেন। স্বাভাবিক ভাবেই ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হন জেমিমা রড্রিগুয়েজ।
আরও পড়ুন