Home খেলাধুলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: সচিনের রেকর্ড ছুঁলেন বিরাট, বলে ভেলকি জাদেজার, ভারতের হাতে...

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: সচিনের রেকর্ড ছুঁলেন বিরাট, বলে ভেলকি জাদেজার, ভারতের হাতে চূর্ণ দক্ষিণ আফ্রিকা

0
জয়ের পরে ভারত। ছবি আইসিসি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

ভারত: ৩২৬-৫ (বিরাট কোহলি ১০১, শ্রেয়স আইয়ার ৭৭, কেশব মহারাজ ১-৩০)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮৩ (২৭.১ ওভার) (মার্কো ইয়ানসেন ১৪, রবীন্দ্র জাদেজা ৫-৩৩, কুলদীপ যাদব ২-৭)  

কলকাতা: এ বারের বিশ্বকাপে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে থাকল বিরাট কোহলির সেঞ্চুরির জন্য। কিন্তু এ রকম সেঞ্চুরি তো বিরাট আগে অনেক করেছেন। তা হলে এদিনটা স্মরণীয় কেন? একদিনের ম্যাচে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ডে সচিন তেন্ডুলকরকে ছুঁলেন বিরাট। সচিনের মতো বিরাটেরও একদিনের ম্যাচে সেঞ্চুরির সংখ্যা দাঁড়াল ৪৯। আর বিরাট এই মাইলফলক ছুঁলেন তাঁর ৩৬তম জন্মদিনে। শুধু তা-ই নয়। বিরাট এই রেকর্ড ছুঁলেন ২৭৭ ইনিংস খেলে। আর সচিন এই রেকর্ড করেছিলেন ৪৫২ ইনিংস খেলে। সে দিক থেকে বিরাট একটু এগিয়ে তো বটেই।  

রবিবার কলকাতা ইডেন গার্ডেন্স-এ আয়োজিত এই ম্যাচ এতটা একপেশে হবে ভাবাই যায়নি। লিগ টেবিলে প্রথম দুটি স্থানে থাকা দুই দলের ম্যাচকে এ বারের বিশ্বকাপে কার্যত ফাইনাল খেলা বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। এই বিশ্বকাপে দুই দলের রেকর্ডও খুব ভালো। ভারত ৭ ম্যাচের মধ্যে ১টিও হারেনি। আর দক্ষিণ আফ্রিকা সমসংখ্যক ম্যাচে ১টি মাত্র খেলায় হেরেছেন। সেটি অবশ্য নেদারল্যান্ডসের কাছে। যদিও সেই হারকে সবাই অঘটন বলেই ধরে নিয়েছিলেন।

এ দিন ভারতের বোলিং আক্রমণের কোনো কূলকিনারাই করতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ৮৩ রানে গুটিয়ে গেল তারা। ২৭.১ ওভারেই শেষ হয়ে গেল তাদের ইনিংস। স্পিন বোলিং-এ ভেলকি দেখালেন রবীন্দ্র জাদেজা। ৩৩ রান দিয়ে ৫টি উইকেট তুলে নিলেন তিনি। কুলদীপ যাদবও কম যান না। তিনিও ২টি উইকেট পেলেন মাত্র ৭ রান দিয়ে। প্রথমে ব্যাট করে ভারত করে ৫ উইকেটে ৩২৬। ফলে ভারতের কাছে ২৪৩ রানে হেরে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮টি ম্যাচের সবক’টি জিতে ১৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করে ভারত লিগ টেবিলের শীর্ষস্থানেই থাকল। আর দক্ষিণ আফ্রিকা ৮টি ম্যাচের মধ্যে ৬টি জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে থাকল দ্বিতীয় স্থানেই।      

খেল দেখালেন বিরাট, শ্রেয়স, রোহিত

টসে জিতে ব্যাট নেয় ভারত। ব্যাট হাতে নিয়েই তাণ্ডব শুরু করে দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সঙ্গী শুভমান গিল। যে ভাবে তাঁরা এগোচ্ছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল একদিনের ম্যাচে ৫০ ওভারে সর্বাধিক রানের রেকর্ড না হয়ে যায়! ৫.৫ ওভারে রোহিত-শুভমান করে ফেলেন ৬২ রান। এর মধ্যে ৪০ রানই রোহিতের। ২৪ বলে ৬টা চার আর ২টো ছয়ের মাধ্যমে রোহিত এই রান করেন। কিন্তু আঘাত হানেন কাগিসো রাবাদা। রোহিতের ক্যাচ চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার হাতে।

নামেন বিরাট কোহলি। সঙ্গী হন শুভমনের। কিন্তু শুভমন আর বেশিক্ষণ উইকেটে ছিলেন না। দলের ৯৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত। কেশব মহারাজের বলে বোল্ড হন শুভমন। এর পরই খেলা শুরু হয় বিরাট কোহলি ও শ্রেয়স আইয়ারের। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো বোলারকেই তাঁরা সমীহ করছিলেন না। বিরাট যে ভাবে এগোচ্ছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল তিনি এ দিনই একদিনের ম্যাচে সচিন তেন্ডুলকরের সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছুঁয়ে ফেলবেন।

বিরাট আর শ্রেয়সের জুটি দুদ্দাড় বেগে এগিয়ে চলছিল। তৃতীয় উইকেটের জুটিতে ১৩৪ রান যোগ হওয়ার পরে তাল কাটল। দলের ২২৭ রানের মাথায় লুঙ্গি এনগিডির বলে আইডেন মার্করামকে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়লেন শ্রেয়স। তাঁর ৮৭ বলে ৭৭ রানের মধ্যে ছিল ৭টা চার আর ২টো ছয়। বিরাটের সঙ্গী হন উইকেটকিপার কেএল রাহুল। আজ তিনি খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। ১৭ বলে ৮ রান করে মার্কো ইয়ানসেনের বলে রাসি ফান ডেয়ার ডুসেনকে ক্যাচ দিয়ে তিনি বিদায় নেন। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে যোগ হয় মাত্র ২২ রান।

world cup virat 05.11 1

সেঞ্চুরি করলেন কোহলি। ছবি আইসিসি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

অন্য প্রান্তে বিরাট কোহলি অটল। তাঁর খেলা দেখে মনে হচ্ছিল তিনি আজ শতরান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে পঞ্চম উইকেটের জুটিতে বিরাটের সঙ্গী হন সূর্যকুমার যাদব। বেশ মারকুটে ব্যাটিং করছিলেন সূর্যকুমার। কিন্তু তিনিও খুব বেশি এগোতে পারলেন না। ১৪ বলে ২২ রান করে তাবরাইজ শামসির বলে উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ দিয়ে যখন তিনি আউট হন তখন ভারতের স্কোরবোর্ডে তখন ২৮৫ রান।

এ বার বিরাটের সঙ্গী হন রবীন্দ্র জাদেজা। ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে চলেছেন বিরাট। সারা ইডেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে বিরাটের সেঞ্চুরি দেখার জন্য। শেষ পর্যন্ত সেই সেঞ্চুরি এল। ম্যাচের শেষ ওভারে লুঙ্গি এনগিডির বলে ১ রান নিয়ে শতরান পূর্ণ করলেন বিরাট। ছুঁয়ে ফেললেন সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড। উল্লাসে ফেটে পড়ল গোটা ইডেন। নিজের ৩৬তম জন্মদিনে এর চেয়ে বড়ো উপহার আর কী হতে পারে! ৫ উইকেটে ৩২৬ রানে ভারত ইনিংস শেষ করল। ১০টা চারের সাহায্যে ১২১ বলে ১০১ রান করে কোহলি এবং ১৫ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকলেন রবীন্দ্র জাদেজা।

দক্ষিণ আফ্রিকার আত্মসমর্পণ  

জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩২৭ রান তাড়া করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এত সহজেই গুটিয়ে যাবে এটা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। ভারতের স্পিন বোলিং-এর মোকাবিলাই করতে পারলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ৫ উইকেট তুলে নিলেন রবীন্দ্র জাদেজা, ২টি কুলদীপ। এমনকি মাত্র ৩ ম্যাচ থেকে ইতিমধ্যেই যিনি ১৪টি উইকেট ঝোলায় ভরে নিয়েছেন সেই মোহম্মদ শামিও ২টি উইকেট পেলেন এ দিন।

তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। কুইন্টন ডি ককের উইকেট পড়ে ৬ রানে। তাঁকে বোল্ড করেন সিরাজ। এর পর উইকেট পড়ার বিরাম ছিল না। দলের ২২, ৩৪, ৪০, ৪০, ৫৯, ৬৭, ৭৯, ৭৯ এবং ৮৩ রানে বাকি উইকেট পড়ে যায়। দুই অঙ্কের রানে পৌঁছোতে পারলেন মাত্র চারজন – টেম্বা বাভুমা, রাসি ফান ডেয়ার ডুসেন, ডেভিড মিলার এবং মার্কো ইয়ানসেন। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করেন ইয়ানসেন — ১৪ রান। এতেই বোঝা যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং-এর হাল কী ছিল।

রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের পাশাপাশি এ দিন উইকেট পেলেন ফাস্ট বোলার মোহম্মদ শামিও। শামি পেলেন ১৮ রানে ২ উইকেট। এ বারের বিশ্বকাপে শামির পাওয়া উইকেটের সঙ্গে দাঁড়াল ১৬। এই বিশ্বকাপে শামি যদি সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহের রেকর্ড করেন তা হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। এ দিনের ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন বিরাট কোহলি।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এ বার পারল না, সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া  

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version