খবর অনলাইন ডেস্ক: মহম্মদ শামি – ভারতের এখনকার ক্রিকেটে এক উল্লেখযোগ্য নাম। শুধু ভারত কেন, সারা বিশ্বেই ইদানীংকালে শামির মতো এত ভালো ফাস্ট বোলার খুব কমই রয়েছেন। যে ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জিতল, যে ভারত ইংল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকাকে তাদেরই মাঠে বধ করল, সেই ভারত দলের সদস্য ছিলেন শামি। একদিনের ম্যাচের গত তিনটি বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট দখল করার নজিরটি গড়েন শামি। একদিনের ম্যাচে সবচেয়ে দ্রুত ১০০টি উইকেট ঝুলিতে ভরার কৃতিত্ব শামির। এবং ওই একদিনের ক্রিকেটে টানা ৩টি ম্যাচে অন্তত ৪টি উইকেট পাওয়ার কৃতিত্বও শামির।
কিন্তু ক্রিকেটজীবনে এমন ভাগ্যবান মানুষটিকে ব্যক্তিগত জীবনে যে ঝড়ঝাপটার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তা খুব মানুষকেই সইতে হয়। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন বারবার সংবাদের শিরোনামে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে চোট-আঘাত তো পেয়েছেনই। কিন্তু তার চেয়েও বড়ো হল, স্ত্রী হাসিন জাহানের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে, মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে, আর সবচেয়ে মারাত্মক হল ম্যাচ ফিক্সিং-এর অপবাদ চাপানো হয়েছে তাঁর ঘাড়ে। শামির বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হামলার অভিযোগ করে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন জাহান। শুধু তা-ই নয়, জাহান অভিযোগ করেন, এক পাকিস্তানি মহিলার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শামি ম্যাচ ফিক্সিং করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিসিসিআই তাঁর চুক্তি ঝুলিয়ে রাখে। পরে অবশ্য সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত হন শামি। এই সময়টাই ছিল শামির জীবনে সবচেয়ে অন্ধকারময়। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত শামি বারবার তাঁর নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু সেই সব দিনের কথা একটু-আধটু বলেছেনও শামি। কিন্তু এত বিস্তারিত বলেননি, যতটা তাঁর বন্ধু উমেশ কুমার বললেন।
“সেই সময়টায় শামি সব কিছুর সঙ্গে লড়াই করছে। তখন ও আমার বাড়িতে আমার সঙ্গে থাকত। কিন্তু যে দিন পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ ফিক্সিং-এর অভিযোগ উঠল ওর বিরুদ্ধে এবং সেই রাতেই তদন্ত ঘোষণা হয়ে গেল, শামি একেবারে ভেঙে পড়ল। ও বলছিল আমি সব কিছু সহ্য করতে পারি কিন্তু দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাকতার করার অভিযোগ সহ্য করতে পারি না।” বন্ধু শুভঙ্কর মিশ্রের পডকাস্ট ‘আনপ্লাগ্ড’-এ এ কথা বলেছেন উমেশ কুমার।
“এটা খবরও হয়েছিল যে সেই রাতে শামি একটা সাংঘাতিক কিছু করতে চেয়েছিল (জীবন শেষ করে দেওয়া)। তখন ভোর ৪টে হবে। আমি জল খেতে উঠেছি। আমি রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলাম। দেখলাম ও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা উনিশতলায় থাকি। কী ঘটতে যাচ্ছিল আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আমি বুঝেছিলাম, ওই রাতটা ছিল শামির জীবনে সবচেয়ে দীর্ঘ রাত। একদিন দু’জনে কথা বলছিলাম। একটা ফোন এল শামির কাছে। শামি ফোনে জানতে পারলেন, যে বিষয়টা নিয়ে তদন্ত হচ্ছিল, কমিটি সেই ব্যাপারে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। সে দিন বোধহয় শামি এতটাই আনন্দ পেয়েছিল, যে আনন্দ একটা বিশ্বকাপ জিতলেও পাওয়া যায় না”, বলেছেন উমেশ।
ওই প্যানেলে শামিও ছিলেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী ভাবে অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালিয়েছিলেন, জীবনযুদ্ধে হার মানেননি।
“এটা নির্ভর করছে আপনি কোন বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং অন্য লোকটির বিবৃতি কতটা সত্যি। যখন আপনি জানতে পারবেন অন্য লোকটির কাজকর্ম অবৈধ এবং আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, আপনি আপনার অগ্রাধিকার ছেড়ে দেবেন না। আমি আজকের যে মহম্মদ শামি, তা যদি না হতাম, আমার অবস্থা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না এবং মিডিয়াও এ সব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাত না। সুতরাং যা আমাকে শামি করেছে, সেটা আমি ছাড়ব কেন? সুতরাং লড়াই আপনাকে চালিয়ে যেতেই হবে”, বলেছেন উমেশ।
গত বছর একদিনের ম্যাচের বিশ্বকাপ চলাকালীন গোড়ালিতে চোট পান শামি। এখন সেই আঘাত থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। এ বছরের শেষ দিকে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে টেস্ট সিরিজ আছে শামি সেই সিরিজে ফিরে আসবেন বলে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন
“লজ্জাহীন”: কে এল রাহুলকে অপমান করায় সঞ্জীব গোয়েনকাকে শিক্ষা দিলেন মহম্মদ শামি