দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩১১-৭ (কুইন্টন ডি কক ১০৯, এইডেন মার্করাম ৫৬, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২-৩৪, মিচেল স্টার্ক ২-৫৩)
অস্ট্রেলিয়া: ১৭৭ (৪০.৫ ওভার) (মার্নাশ লাবুশানে ৪৬, কাগিসো রাবাদা ৩-৩৩, কেশব মহারাজ ২-৩০)
শ্রয়ণ সেন
এই বারই সম্ভবত প্রথম বার, যখন সাউথ আফ্রিকার ওপরে কার্যত কেউ কোনো বাজি ধরেনি। স্বদেশের হাশিম আমলা ছাড়া কেউ তাদের সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট বলে গণ্য করছেন না। অথচ এই বারই তারা রীতিমত তুখোড় খেলছে। গোটা ব্যাটিং অর্ডারটা চূড়ান্ত ফর্মে। ডি কক, তাঁর শেষ বিশ্বকাপে পণ করে এসেছেন, দুর্দান্ত কিছু করবেনই। রাসি ফান ডেয়ার ডুসেন, আইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, হাইনরিখ ক্লাসেন সবাই ফর্মে। এ দিন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন কুইন্টন ডি কক।
বোলিং তো সাউথ আফ্রিকার বরাবরই ভালো। আনরিক নর্কিয়ার অভাব টেরই পাওয়া যাচ্ছে না। কাগিসো রাবাদা, ভারতীয় বংশোদ্ভূত কেশব মহারাজ বা তাবরাইজ শামসি বুঝতেই দিচ্ছেন না নর্কিয়ার অভাব। দলকে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেঁটেখাটো চেহারার টেম্বা বাভুমা। বাভুমার সব থেকে বড়ো কৃতিত্ব, বর্ণবিদ্বেষের প্রশ্নে সব সময় দু’ভাগ হয়ে থাকা দলটাকে তিনি একজোট করতে পেরেছেন।
টস অস্ট্রেলিয়ার, ব্যাট দক্ষিণ আফ্রিকার
বৃহস্পতিবার লখনউয়ের ভারত রত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আর সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে টেম্বা বাভুমার দল। এ বারের বিশ্বকাপে দু’টি ম্যাচেই সেঞ্চুরি করলেন কুইন্টন ডি কক। ডি কক করলেন ১০৬ বলে ১০৯ রান।
ডি ককের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করলেন অন্য ব্যাটাররা, বিশেষ করে আইডেন মার্করাম (৪৪ বলে ৫৬ রান), বাভুমা (৫৫ বলে ৩৫ রান)। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলল ৭ উইকেটে ৩১১ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে উইকেটগুলো মোটামুটি ভাগাভাগি করে নিলেন প্রায় সব বোলার।
৭০ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট
জয়ের জন্য ৩১২ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে এ রকম বিপন্ন অস্ট্রেলিয়াকে খুব কমই হতে দেখা গিয়েছে। একজন ব্যাটারও অর্ধশত রানে পৌঁছোতে পারলেন না। সর্বাধিক রান ৪৬, মার্নাস লাবুশানে। তাও সেটা ৭৪ বলে। প্রচণ্ড মারমুখী ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভ স্মিথ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের দাপটে তাঁরা উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতেই পারলেন না। ওয়ার্নার ২৭ বলে ১৩ রান করে ধরা দিলেন লুঙ্গি এনগিডির বলে। আর স্টিভ স্মিথকে তুলে নিলেন কেশব মহারাজ। স্মিথ করলেন ১৬ বলে ১৯।
শুরু থেকেই বিপর্যয় অস্ট্রেলিয়ার। ৭০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট পড়ে গেল। রাবাদা আর কেশবকে খেলতে খুব বেগ পেতে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার। রাবাদা তুলে নিলেন ৩ উইকেট আর কেশব ২ উইকেটে। সপ্তম উইকেটে লাবুশানে আর মিচেল স্টার্ক কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁরা ৬৯ রান যোগ করেন। দলের ১৩৯ রানের মাথায় স্টার্ক আউট হতেই একে একে নিভে গেল অস্ট্রেলিয়ার সব প্রদীপ। বাকি চারটি উইকেট পড়ে গেল ৩৮ রানের মধ্যে। ইনিংসের ৯.১ ওভার বাকি থাকতেই গুটিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার জিতে গেল ১৩৪ রানে।
লিগ টেবিলে কে কোথায়
এই ম্যাচের পর এ বারের বিশ্বকাপে ১০টি দলের প্রত্যেকেরই দুটি করে ম্যাচ খেলা হয়ে গেল। এ পর্যন্ত চারটি দেশ তাদের দুটি ম্যাচই জিতে ৪ পয়েন্টে আছে। এই দেশগুলি হল দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু নেট রান রেটের বিচারে শীর্ষ রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই নেট রান রেটের বিচারে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান।
আর যে দেশগুলো একটাও ম্যাচ জিততে পারেনি তারা হল শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তান। নেট রান রেটের বিচারে একেবারে সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান এবং ঠিক তার ওপরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া রয়েছে নবম স্থানে। কেউ কখনও কল্পনা করেছিল? এমনকি নেট রান রেটের বিচারে তাদের ওপরে রয়েছে নেদারল্যান্ডস। ১টি করে ম্যাচ জিতে নেট রান রেটের বিচারে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইংল্যান্ড এবং ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: রোহিতের ব্যাটিং এবং বুমরাহের বোলিং-এ ভর করে আফগানিস্তানকে সহজেই হারাল ভারত