খবর অনলাইন ডেস্ক: স্কিলাচিকে মনে আছে? সালভাতোর টোটো স্কিলাচি। ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফুটবলের আগে স্কিলাচির নাম কেউ একটা শুনেছিলেন বলে মনে হয় না। সেই স্কিলাচি ১৯৯০ বিশ্বকাপের জন্য স্মরণীয় হয়ে গেলেন। ওই বিশ্বকাপে ইতালির প্রথম ম্যাচে পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসাবে নামানো হয় স্কিলাচিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলে নিজের স্থানটি পাকা করে সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারের সম্মান ‘গোল্ডেন বল’ পুরস্কার পেলেন। শুধু তা-ই নয়, ওই প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক গোলদাতাও তিনি। ৬টি গোল করে পেলেন ‘গোল্ডেন বুট’। আর তাঁর দল টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয়েছিল।
১৯৯০-এর বিশ্বকাপ দর্শকদের অনেকটাই মনে থাকবে স্কিলাচির জন্য। তাঁর সেই আবেগপ্রবণ এবং চোখ বড়ো বড়ো করে উচ্ছ্বাস প্রকাশের ভঙ্গিমা। সেই সালভাতোর স্কিলাচি চলে গেলেন। মাত্র ৫৯ বছর বয়স হয়েছিল। ২০২২ থেকে কোলোন ক্যানসারে ভুগছিলেন। বুধবার সকালে তিনি প্রয়াত হন বলে ইন্টার মিলান ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে।
ইতালির নীচের দিকের ক্লাব মেসিনা থেকে উত্থান। ১৯৮৮-৮৯ মরশুমে প্রথম নজর কাড়েন স্কিলাচি। ইতালির দ্বিতীয় ডিভিশনে সিসিলির ক্লাব মেসিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি করেছিলেন। এর পরেই ১৯৮৯-তে তিনি যোগ দেন তুরিনের ক্লাব জুভেনতাসে। জুভেনতাসের হয়েও লিগে ১৫টা গোল আর অন্যান্য প্রতিযোগিতায় ২১টা গোল করে সবার নজর কাড়েন স্কিলাচি। সেই মরশুমেই ইতালীয় দলটির হয়ে কোপ্পা ইতালিয়া এবং উয়েফা কাপ ঘরে আনেন।

৯০-এর বিশ্বকাপে গোল করার পরে স্কিলাচি। ছবি ফিফার ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
১৯৯০-এর বিশ্বকাপে স্কিলাচি
স্কিলাচির এই পারফরমেন্স দেখে ১৯৯০ বিশ্বকাপে তাঁকে ইতালির জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করেন কোচ আজেগ্লিও ভিসিনি, যদিও কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলার বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা ছিল না তাঁর। আর বিশ্বকাপের দলে নির্বাচিত হয়েই ‘মার দিয়া কেল্লা’।
গ্রুপ ‘এ’-তে ইতালি ছিল অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসাবে নেমে গোল করেন স্কিলাচি। এবং সেই গোলেই অস্ট্রিয়াকে হারায় ইতালি। এর পর চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে লিগের খেলায় ২-০ গোলে জেতে ইতালি, গোলদাতা সেই স্কিলাচি এবং রবার্তো বাজ্জিও।
‘রাউন্ড অফ ১৬’-তে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জেতে ইতালি। গোলদাতা সেই স্কিলাচি আর বাজ্জিও। এর পর কোয়ার্টার ফাইনালে রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ইতালি। আবার সেই স্কিলাচির একমাত্র গোলে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় ইতালি। এবার লড়াই গতবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ১-১ ড্র থাকে। ইতালির হয়ে গোল করে নিজের পঞ্চম গোলটি করেন স্কিলাচি। কিন্তু টাইব্রেকারে চোটের কারণে স্কিলাচি শট নেননি। নিলে হয়তো ইতালির ভাগ্য অন্যরকম হত। যাই হোক টাইব্রেকারের ফলে হেরে যায় ইতালি।
শেষ পর্যন্ত বাজ্জিও ও স্কিলাচির গোলে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতালি তৃতীয় স্থান পায়। সেবার বিশ্বকাপে ইতালি টাইব্রেকারের গোল বাদ দিয়ে মোট ১০টি গোল করেছিল। তার মধ্যে ৬টি গোলই সালভাতোর স্কিলাচির।
সেই ১৯৯০ সালেই স্কিলাচি ‘বালঁ দ্যরে’ শেষ করেছিলেন দ্বিতীয় স্থানে থেকে। প্রথম স্থানে ছিলেন জার্মানির লোথার ম্যাথেউস। ১৯৯২-এ জুভেনতাস ছেড়ে ইন্টার মিলানে যোগ দেন স্কিলাচি। ১৯৯৪ সালে সেই ক্লাবের হয়ে আবার উয়েফা কাপ জিতেছিলেন।
১৯৯৪ সালে যোগ দিয়েছিলেন জাপানের ক্লাব জুবিলো ইওয়াতায়। ইতালির প্রথম ফুটবলার হিসাবে জাপানের জে লিগে খেলেন। ১৯৯৭ সালে জুবিলো ইওয়াতাকে লিগ জিতিয়ে দিয়েছিলেন স্কিলাচি। ১৯৯৯ সালে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন তিনি।
১৯৯০-এর পর আর কোনো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাননি স্কিলাচি। তবে সেই বিশ্বকাপের জন্যই ফুটবলপ্রেমীদের মনে থেকে যাবেন স্কিলাচি। তাঁর প্রয়াণে ইন্টার মিলান বলেছে, “ইতালিয়া ৯০-এর (সে বছর বিশ্বকাপ ইতালিতেই হয়েছিলে) সেই জাদুময় রাতগুলিতে গোটা দেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সালভাতোর স্কিলাচি।”