Home খেলাধুলো ফুটবল আইএসএল: ডুরান্ডের বদলা, দুবার পিছিয়ে থেকেও নর্থইস্টকে হারিয়ে জয়ে ফিরল মোহনবাগান

আইএসএল: ডুরান্ডের বদলা, দুবার পিছিয়ে থেকেও নর্থইস্টকে হারিয়ে জয়ে ফিরল মোহনবাগান

0
জয়ের তিন নায়ক – দীপেন্দু বিশ্বাস, শুভাশিস বোস এবং জেসন কামিংস। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।

মোহনবাগান এসজি: ৩ (দীপেন্দু বিশ্বাস, শুভাশিস বোস, জেসন কামিংস)

নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি: ২ (মহম্মদ আলি বেমামের, আলেদিন আজারাই)

কলকাতা: এবারের আইএসএল অভিযানের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি মোহনবাগান সুপার জায়েন্টের। প্রথম খেলাতে মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে ড্র করেছিল। সেই খেদ মিটিয়ে সোমবার জয়ে ফিরল মোহনবাগান। শুধু তা-ই নয়, নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে এবারের ডুরান্ড কাপে হারের বদলাও নিল তারা।

সোমবার কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত ম্যাচে দুবার পিছিয়ে থেকে সমতা ফেরায় মোহনবাগান। এবং শেষ পর্যন্ত জয়সূচক গোলটি করে। এবারে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে প্রথমার্ধে ২টি গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি গোল করে ম্যাচটিকে টাইব্রেকারে নিয়ে গিয়েছিল নর্থইস্ট। সেই টাইব্রেকারে হেরে যায় মোহনবাগান। ডুরান্ড কাপ হাতছাড়া হয় তাদের।

এদিন সবুজ-মেরুনবাহিনীর জয়ে অবদান থাকল দুই বঙ্গসন্তানের – দীপেন্দু বিশ্বাস এবং শুভাশিস বসু। ম্যাচের ৪ মিনিটে নর্থইস্ট গোল করে এগিয়ে যাওয়ার ছ’ মিনিট পরে সমতা ফেরান দীপেন্দু বিশ্বাস। তরুণ দীপেন্দুর উপর বেশ আস্থা রয়েছে কোচ হোসে মোলিনার। কোচের আস্থার দাম দিলেন দীপেন্দু। ম্যাচের ২৪ মিনিটে আবার গোল করে এগিয়ে যায় নর্থইস্ট। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার মিনিটপনেরো পরে মোহনবাগানের হয়ে সেই গোল শোধ করেন আর-এক বঙ্গসন্তান শুভাশিস বোস। কিছুদিন ধরেই শুভাশিসের খেলা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আশা করা যায়, আপাতত সেই সমালোচনায় ইতি টানতে পারবেন শুভাশিস। শেষ পর্যন্ত জয় এল ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার জেসন কামিংসের গোলে। তবে মোহনবাগান সহজেই আরও বেশি গোলে জিততে পারত যদি লিস্টন কোলাসো নিজের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারতেন।

নর্থইস্টের আক্রমণ। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।

তবে এদিন খেলার পরিসংখ্যান দেখে বোঝাই যাচ্ছে অনুযায়ী নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে বেশ দমিয়ে রেখেছিল মোহনবাগান। বল দখলে রাখার ব্যাপারে মোহনবাগান (৬০.৪%) অনেক বেশি এগিয়ে ছিল নর্থইস্টের (৩৯.৬%) চেয়ে। সফল পাস করার ব্যাপারেও এগিয়ে মোহনবাগান (৮১%)। সেই তুলনায় নর্থইস্টের ক্ষেত্রে সফল পাস ৭১%। গোলে শট নেওয়ার ব্যাপারেও এগিয়ে মোহনবাগান। মোহনবাগান যেখানে ৭টি শট নিয়েছে, সেখানে নর্থইস্ট নিয়েছে ৬টি শট। কর্নারও পেয়েছে মোহনবাগান বেশি। তারা পেয়েছে ৯টি কর্নার এবং নর্থইস্ট পেয়েছে ৭টি কর্নার।

প্রথমার্ধে নর্থইস্ট এগিয়ে যায় ২-১ গোলে  

তবে রক্ষণ নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে মোহনবাগানের। সেই রক্ষণের ভুলেই ম্যাচ শুরু হওয়ার ৪ মিনিটের মধ্যেই গোল খেয়ে যায় তারা। ডানদিক থেকে মোহনবাগানের বক্সের কাছাকাছি সহজেই উঠে আসেন আলেদিন আজারাই। তিনি প্রায় ফাঁকায় থাকে মহম্মদ আলি বেমামেরকে পাস বাড়ান। বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন বেমামের। মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কাইথ তা ধরতে ব্যর্থ হন। নর্থইস্ট এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।

তবে ৬ মিনিটের মধ্যেই সেই গোল শোধ করে দেয় মোহনবাগান। মোহনবাগানের ডিফেন্ডার দীপেন্দু তখন অরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন নর্থইস্টের বক্সে। বাঁদিক থেকে দিমিত্রি পেত্রাতোসের ফ্রি-কিক চলে আসে দীপেন্দুর কাছে। দীপেন্দু অনেকটা লাফিয়ে উঠে তাতে হেড করেন। নর্থইস্টের গোলকিপার গুরমিত সিংকে এড়িয়ে সেই বল জড়িয়ে যায় তাদের জালে। ফল দাঁড়ায় ১-১।

দিমিত্রি পেত্রাতোসকে ঠেকানোর চেষ্টা। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।

গোল খেয়ে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে নর্থইস্ট এবং এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। মোহনবাগান তাদের দ্বিতীয় গোল পেতে এতটাই মরিয়া হয়ে ওঠে যে তারা তাদের রক্ষণ, মাঝমাঠ প্রায় ফাঁকা রেখেই সবাই মিলে আক্রমণে উঠে আসে। আর তারই সুযোগ নেয় নর্থইস্ট। প্রতি-আক্রমণ থেকে গোল করে এগিয়ে যায় তারা। মোহনবাগানের গ্রেগ স্টুয়ার্টের শট নর্থইস্টের রক্ষণে প্রতিহত হয়ে চলে আসে জিতিন মাদাতিল সাবরানের কাছে। জিতিন নিখুঁত পাস বাড়ান আলেদিন আজারাইকে। দুজনে পাস চালাচালি করতে করতে পৌঁছে যান মোহনবাগানের বক্সে। এই বক্সেই জিতিন আবার বল দেন আজারাইকে। আজারাই স্বচ্ছন্দে পরাস্ত করেন বিশালকে। রক্ষণের কেউ ট্যাকল করলেন না জিতিন বা আজারাইকে। নর্থইস্ট এগিয়ে গেল ২-১ গোলে।  

গোল খাওয়ার পর মোহনবাগান তা শোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কখনও মনবীর, কখনও লিস্টন। কিন্তু নর্থইস্টের সৌভাগ্য, তারা বেঁচে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানের ২টি গোল

ম্যাচে সমতা ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলতে থাকে মোহনবাগানের তরফে। এবং ৬১ মিনিটে তার ফল পায় তারা। তখন মুষলধারে বৃষ্টি চলছিল। তারই মধ্যে ডানদিক থেকে গ্রেগ স্টুয়ার্টের দেওয়া ক্রসে পা লাগিয়ে নর্থইস্টের গোলে ঠেলেন টম অ্যালড্রেড। গোলকিপার গুরমিতের হাত থেকে ভেজা বল ফসকে গেলে তা পেয়ে যান পেত্রাতোস। পেত্রাতোসও সেই বল নর্থইস্টের গোলের দিকে ঠেলে দেন। কিন্তু সেই বলও গোললাইনে ঠিকমতো তালুবন্দি করতে পারেননি গুরমিত। তাঁর হাত থেকে ছিটকে যাওয়া বল আসে শুভাশিসের কাছে। শেষ পর্যন্ত শুভাশিসই আসল কাজটা করেন। ম্যাচের ফল দাঁড়ায় ২-২।

জয়ের পরে মোহনবাগান। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।

ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর থেকেই ঘন ঘন আক্রমণে উঠে আসে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ইতিমধ্যে আক্রমণ আরও জমাট বাঁধতে পেত্রাতোসকে তুলে নিয়ে তাঁর জায়গায় অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেনকে নামান মোহনবাগান কোচ মোলিনা। জয়সূচক গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ৮৫ মিনিটের মাথায় ফাঁকা গোল পেয়ে যান ম্যাকলারেন। কিন্তু তিন ডিফেন্ডার তাঁকে ঘিরে ধরায় তাঁর শট গোলে পৌঁছয়নি। 

এর দু’ মিনিট পরেই লক্ষ্যপূরণ হয় মোহনবাগানের। নর্থইস্টের বক্সের সামনে থেকে বাঁ দিকে সহাল আবদুল সামাদকে বল পাঠানো হয়। সেইসময়েই বক্সে ঢুকে পড়েন জেসন কামিংস। সহাল তাঁর কাছে ক্রস পাঠান এবং সেই ক্রস থেকে বাঁপায়ের দুর্দান্ত শটে বল সোজা নর্থইস্টের গোলে ঢুকিয়ে দেন অস্ট্রেলীয় তারকা। এর পর দু’ পক্ষই গোল করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান ৩-২ গোলে জিতে যায়।

এদিনের জয়ের ফলে ২টি ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করে মোহনবাগান লিগ টেবিলে উঠে এল চতুর্থ স্থানে। এবং সমসংখ্যক খেলায় ৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে নর্থইস্ট ইউনাইটেড রইল সপ্তম স্থানে।

আরও পড়ুন

আইএসএল: ফের এগিয়ে থেকে পরাজয়, কেরল ব্লাস্টার্স-এর কাছে হেরে টানা ২টি হার ইস্টবেঙ্গলের

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version