কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৭৪-৮ (অজিঙ্ক রাহানে ৫৬, সুনীল নারাইন ৪৪, ক্রুনাল পাণ্ড্য ৩-২৯, জোশ হ্যাজল্উড ২-২২)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ১৭৭-৩ (১৬.২ ওভার) (বিরাট কোহলি ৫৯ নট আউট, ফিল সল্ট ৫৬, রজত পাটীদার ৩৪, সুনীল নারাইন ১-২৭)
কলকাতা: আইপিএল-এ ট্রফি জয়ে খরা কি এ বার কাটাতে চলেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)? উদ্বোধনী ম্যাচে তারা গত বারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (কেকেআর) যে ভাবে ধরাশায়ী করল তাতে বলাই যায় এ বার আরসিবি কিন্তু বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এ দিন আরসিবি-র জয়ের মূলে দু’জন – কেকেআর-এর প্রাক্তনী ফিল সল্ট এবং কিংবদন্তি বিরাট কোহলি।
আরসিবি যে এ বারের ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার, তা বোঝাই যাচ্ছে দলের গঠন থেকে। অন্যান্য বার দলের প্রথম দিককার ব্যাটাররা বেশ শক্তিশালী হতেন। কোনো ভাবে যদি প্রতিপক্ষ দল আরসিবি-র গোড়ার দিককার তিন-চার জন ব্যাটারকে প্যাভেলিয়নে ফিরিয়ে দিতে পারত তা হলেই বিপদে পড়ত বিরাট কোহলির দল। এ বার কিন্তু দলের মিডল্ অর্ডারের দিকেও নজর দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দলের গোড়ার দিকটা তো শক্তিশালী আছেই, মিডল্ অর্ডারও শক্তিশালী হয়েছে। ব্যাটিং-এ গোড়ার দিকেই রয়েছেন ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটার ফিল সল্ট, বিরাট কোহলি। মিডল্ অর্ডারে আছেন ইংল্যান্ডের সফল অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিংস্টোন, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিশ্রুতিমান অলরাউন্ডার টিম ডেভিড, উইকেটকিপার-ব্যাটার জিতেশ শর্মা, দলের অধিনায়ক রজত পাটীদার প্রমুখ।
রান এল শুধু অজিঙ্ক-সুনীলের ব্যাটে
এ বার শনিবারের ম্যাচের কথায় আসা যাক। টসে জিতে কেকেআর-কে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল আরসিবি। এ বারের আইপিএল-এ ব্যাটে যে ঝড় তুলবেন তা এ দিন প্রমাণ করে দিলেন অজিঙ্ক রাহানে। শুরুতেই আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক। কিন্তু সেই বিপদ থেকে দলকে টেনে তুললেন রাহানে ও সুনীল নারাইন। আইপিএল-এর মহানিলামে প্রথমে দল পাননি রাহানে। শেষ পর্যন্ত মাত্র দেড় কোটি টাকায় কেনে কেকেআর এবং তাঁকে অধিনায়ক করে। এ বারের আইপিএল-এ ১০ দলের মধ্যে সবচেয়ে কম দর পাওয়া অধিনায়ক রাহানে প্রথম ম্যাচেই দেখিয়ে দিলেন, তিনি কী করতে পারেন। প্রায় দুশোর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে রান করলেন তিনি (৩১ বলে ৫৬ রান)। যোগ্য সঙ্গত করলেন সুনীল নারাইন (২৬ বলে ৪৪ রান)। তাঁরা যখন ব্যাট করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল শুরুটা ভালোই করতে চলেছে কেকেআর।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিরাটকে কি উৎসাহ জুগিয়েছিলেন শাহরুখ খান? ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
কিন্তু ওই পর্যন্তই। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে তাঁরা দু’জনে ৯.১ ওভারে ১০৩ রান যোগ করলেন ঠিকই, কিন্তু সুনীল প্যাভেলিয়নে ফিরতেই বাকি সকলেই তাঁকে অনুসরণ করলেন। বাকি ১০ ওভারে কেকেআর যোগ করল ৬৭ রান, আরও সাত উইকেট হারিয়ে। পৌনে ২৪ কোটি টাকা দিয়ে কেনা বেঙ্কটেশ আয়ারের অবদান ৭ বলে ৬ রান। আরসিবি-র সফল বোলার হয়ে উইকেট তুলে নিলেন ক্রুনাল পাণ্ড্য (২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট) এবং জোশ হ্যাজল্উড (২২ রান দিয়ে ২ উইকেট)।
‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ ক্রুনাল পাণ্ড্য
জয়ের জন্য দরকার ১৭৫ রান। শুরু থেকেই ঝড় তুলে দিলেন ফিল সল্ট। বিরাট গোড়ার দিকে কিছুটা সংযত ছিলেন। কিন্তু পরে তিনিও সল্টের সঙ্গে সঙ্গত করতে শুরু করলেন। দু’জনে অবিচ্ছেদ্য থেকে মাত্র ৮.৩ ওভারে যোগ করলেন ৯৫ রান। ৩১ বলে ৫৬ রান করে বিদায় নিলেন সল্ট। ১০ বলে ১০ রান করে দেবদত্ত পাড়িক্কল বিদায় নেওয়ার পর বিরাটের সঙ্গী হলেন অধিনায়ক রজত পাটীদার। রজত প্রমাণ করলেন, যোগ্য খেলোয়াড় হিসাবেই তিনি অধিনায়ক হয়েছেন। ১৬ বলে ৩৪ রান করে যখন তিনি বিদায় নিলেন তখন জয়ের জন্য দরকার মাত্র ১৩ রান, হাতে ৪.৩ ওভার। ৩.৪ ওভার বল বাকি থাকতেই দলকে জয়ে পৌঁছে দিলেন বিরাট কোহলি (৩৬ বলে ৫৯ নট আউট) এবং লিয়াম লিভিংস্টোন (৫ বলে ১৫)।
কেকেআর-এর কোনো বোলারই এ দিন দাগ কাটতে পারেননি – সে স্পেন্সার জনসন হোন বা বরুণ চক্রবর্তী কিংবা হর্ষিত রানা অথবা বৈভব অরোরা। তাঁদের বোলিং ফিগারই হতাশা জাগায়। হর্ষিত ৩ ওভারে দিলেন ৩২ রান, স্পেন্সার জনসন ২.২ ওভারে দিলেন ৩১ রান, বরুণ চক্রবর্তী ৪ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ১ উইকেট, বৈভব অরোরা ৩ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ১ উইকেট। এঁদের মধ্যে মন্দের ভালো সুনীল – ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ১ উইকেট। এ দিন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন ক্রুনাল পাণ্ড্য।