প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। জঙ্গলের কাদা, ডলোমাইট ও পলি সরিয়ে সাফারির পথ পরিষ্কার হওয়ার পর গত শুক্রবার থেকে চিলাপাতা, শালকুমার ও কোদালবস্তি পয়েন্টে ফের শুরু হয়েছে কার সাফারি।
দীর্ঘ বিরতির পর এমন ছন্দে ফেরা দেখে বেজায় খুশি স্থানীয় জিপসি মালিকরা। তাঁদের কথায়, “একেবারে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা!” — দুর্যোগ কাটার এত দ্রুত পরেই যে এত পর্যটক সাহস করে কার সাফারির জন্য পাহাড়ে আসবেন, তা তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি।
চিলাপাতা, কোদালবস্তি-মেন্দাবাড়ি ও শালকুমার মিলিয়ে মোট ১৯টি জিপসি এখন সাফারিতে ব্যস্ত।
চিলাপাতা জিপসি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল রাভা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পর্যটকদের ভিড় এমন যে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে সাফারির জন্য। দুর্যোগ কাটিয়ে যে এভাবে তারা ফিরে আসবেন, এটা আনন্দের।”
একইভাবে চিলাপাতা ইকো ট্যুরিজম সোসাইটির সভাপতি দিলীপ ওরাওঁ-এর মতে,“শুধু দিনের সাফারি নয়, পর্যটকরা এখন এলাকার লজ, রিসর্ট ও হোমস্টেতে রাত কাটাচ্ছেন। এতে স্থানীয় ব্যবসাও আবার চাঙা হচ্ছে।”
চিলাপাতা বনাঞ্চলে প্রায় ৫০টির মতো রিসর্ট ও হোমস্টে রয়েছে। এছাড়া জলদাপাড়ার নতুন পর্যটন কেন্দ্র শিসামারা — যা সম্প্রতি শিসামারা নদীর জলে ও ভুটানের পলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল — সেটিও এখন অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। সেখানে ১৯টি লজ, রিসর্ট ও হোমস্টে ফের পর্যটকবরণে প্রস্তুত।
জলদাপাড়া রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস রাউথের কথায়,“দুর্যোগের সময় অনেকে বুকিং বাতিল করেছিলেন, এখন তাঁরাই ফের যোগাযোগ করছেন। আমরা সাফারি-সহ সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
গড়িয়া থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে চিলাপাতায় কার সাফারিতে আসা এক পর্যটক বলেন, “আমরা সোমবার সাফারি করেছি, কোনও অসুবিধা হয়নি। অভিজ্ঞতাটা দারুণ।”
এদিকে বনদফতর জানিয়েছে, জঙ্গলের ভেতরে এখনও কিছু জায়গায় ডলোমাইট মিশ্রিত কাদা ও পলি রয়েছে। সেগুলি শুকিয়ে গেলেই হাতি সাফারি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বনদফতর।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সংরক্ষক নবিকান্ত ঝা বলেন, “কার সাফারিতে ভিড় বেড়েছে। এখন হাতি সাফারি চালুর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, মাদারিহাটেও কার সাফারি চালুর পরিকল্পনা চলছে।”
জলদাপাড়ার মাদারিহাট অঞ্চলে ২৫টি জিপসি রয়েছে, এবং সেখানেও শিগগিরই পর্যটকদের জন্য সাফারি খুলে দেওয়া হতে পারে বলে বনদফতর সূত্রে খবর।দুর্যোগের পর এমন দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার পর্যটন মহলে “হোপফুল কামব্যাক” হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আশা, এই শীতকালীন মরশুমে জলদাপাড়া ফের ভরে উঠবে দেশি-বিদেশি পর্যটকে।
আর পড়ুন: ধসে বিপর্যস্ত! মেরামতির জন্য বন্ধ থাকবে পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম সড়ক, কত দিন জেনে নিন