নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূমের রুক্ষ পাথুরে মাটি আসলে কতটা উর্বর, তার নমুনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী। সেই মাটি যে কতটা উর্বর এবং ফলদায়ী তার নমুনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বীরভূমের আনাচেকানাচে। সেই উর্বরতা আজও একইভাবে প্রতীয়মান। বোলপুর শান্তিনিকেতন থেকে ক্যানাল পার হয়ে ফুলডাঙার কোল ঘেঁষে তেমনি এক উর্বরতার খোঁজ পাওয়া গেল।
ফুলডাঙা গ্রামের প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত এবং মানবতার দীক্ষায় দীক্ষিত সদ্য কৈশোর পেরোনো যুবক-যুবতী সুদর্শন শর্মা, চৈতালি টুডু, মিনতি মুর্মু, অনুশ্রী হেমব্রম, শম্পা মুর্মুরা গ্রামের কচিকাঁচাদের নিয়ে শুরু করেছে ‘সারদা পাঠশালা’। গ্রামের বাচ্চারা সেখানে আসে, পড়াশোনা করে, খেলাধুলা করে, প্রার্থনা করে। একসাথে বড় হয়ে ওঠার জন্য যা যা করা দরকার তার সবই চেষ্টা করে তারা। সেই চেষ্টায় শামিল হল কলকাতা নিমতা থেকে বালার্ক থিয়েটার গ্রুপ।

চলছে কর্মশালা।
গত ২৮ তারিখ তারা পৌঁছে গিয়েছিল সেই সারদা পাঠশালায়। সেখানে সারাদিন ধরে থিয়েটার নিয়ে, নাটক নিয়ে, স্টোরিটেলিং নিয়ে, মূকাভিনয় নিয়ে বালার্কর সদস্যরা মিশে গিয়েছিলেন সেই পঞ্চান্ন জন কচিকাঁচার সাথে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের অধ্যাপক ড. গগনদীপ এবং বালার্কর নির্দেশক পূজা কুণ্ডু তাদের সাথে থিয়েটারের ওয়ার্কশপ করলেন। দুপুরে একসাথে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া হল, পুণ্য বাস্কির নেতৃত্বে ‘ফুলডাঙা সাগেন সাকাম গাঁওতা’ ক্লাবের সদস্যদের তত্বাবধানে। আর সন্ধেবেলা বেশ কিছু গুণী মানুষের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মেতে উঠল শিশুরা।
বালার্কর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে সম্পাদক নীলাঞ্জন হালদার জানালেন, এই গুণী মানুষদের সঙ্গে ছোটো ছোটো কচিকাঁচাদের একটি যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়া, যাতে সারদা পাঠশালার কান্ডারি যুবক-যুবতীদের এই মহতী উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জুড়ে নেওয়া যায় আরও কিছু মানুষকে।
এই সান্ধ্য আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুদৃপ্ত ঠাকুর, অধ্যাপক ড. মানবেন্দ্রনাথ সাহা, বিশিষ্ট থিয়েটার গবেষক ড. আশীষ গোস্বামী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. গগনদীপ এবং বাংলা থিয়েটারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নির্দেশক কল্লোল ভট্টাচার্য। তাঁরা শিশুদের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরলেন নিজেদের ছেলেবেলার কথা, বর্তমান ছেলেবেলার সংকটের কথা। শিক্ষা আর সংস্কৃতিচর্চা কী ভাবে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায়, গল্পের মতন করে সে কথা তুলে ধরলেন তাদের সামনে।

হল খাওয়াদাওয়াও।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-ছাত্রী পায়েল হালদার সারদা পাঠশালার শিশুদের জন্য পঠনপাঠন সামগ্রী নিয়ে আসেন আর বিশিষ্টজনদের হাত দিয়ে তাদের হাতে তুলে দেয়। সান্ধ্য আয়োজনের শেষ হল একটি ছোট্টো প্রযোজনার মাধ্যমে। বালার্কর নির্দেশক পূজা কুণ্ডুর নির্দেশনায় নির্মিত সেই প্রযোজনায় যোগ দিয়েছিল সারদা পাঠশালার কচিকাঁচারাই। অনুষ্ঠানশেষে গ্রামের ছেলে, গবেষক ড. পুণ্য বাস্কি জানান সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের পরে এই ছোটো ছোটো শিশুদের মুখে যখন হাসি দেখতে পাওয়া যায়, সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানের শেষে সম্পাদক নীলাঞ্জন হালদার বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানান উপস্থিত সম্মাননীয় অতিথিদের, সারদা পাঠশালার সকলকে, ‘ফুলডাঙা সাগেন সাকাম গাঁওতা’র সকল সদস্যকে, ড. পুণ্য বাস্কি, পায়েল হালদার আর গ্রামবাসীদের।
ছবি: নীলাঞ্জন হালদার