প্রায় ন’বছরের অপেক্ষার পর রাজ্যে ফের শুরু হচ্ছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষা ঘিরে বড় প্রশ্ন— দাগি প্রার্থীরা কি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসবেন?
শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্ন বারবার তোলা হলেও, সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে পারলেন না কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। তিনি শুধু বলেন, “এই প্রশ্নের উত্তর ১৪ তারিখের আগে দেব না।”
সুপ্রিম কোর্টের সতর্কবার্তা
এর আগে একাধিকবার এসএসসি-কে সতর্ক করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ—
- শুধু কমিশনের তালিকায় থাকা দাগি নয়,
- যারা দাগি হয়েও স্কুলে যোগ দেননি,
তাদেরও নতুন পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যাবে না।
গত সোমবার আদালত ফের সতর্ক করে জানায়, পরীক্ষায় যাতে কোনও দাগি ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এসএসসি-কে। এর আগেও রাজ্য সরকার এবং এসএসসি-কে এই ইস্যুতে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারপতিরা। প্রশ্ন উঠেছিল, “এরা কোন নয়নের মণি, যে দাগিদের হয়ে সওয়াল করছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল?”
শনিবার রাতে কমিশন ১৮০৬ জন দাগি শিক্ষক-শিক্ষিকার নামের তালিকা প্রকাশ করলেও, তাদের কেউ নতুন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েই গেল কমিশন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত নজরদারি
সিদ্ধার্থ মজুমদার অবশ্য এদিন বিস্তারিত জানান প্রশ্নফাঁস আটকাতে কমিশনের পদক্ষেপের কথা।
- প্রতিটি প্রশ্নপত্রে থাকবে আলাদা সিকিউরিটি ফিচার।
- প্রশ্নপত্রের ছবি তোলা বা বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করলে ধরা যাবে কোন পরীক্ষার্থী করেছেন।
- কমিশনের দাবি, বেআইনি কাজ হলে আধঘণ্টার মধ্যেই তা শনাক্ত করা সম্ভব।
- তবে নিরাপত্তার কৌশলগুলি প্রকাশ্যে আনতে নারাজ এসএসসি।
সিদ্ধার্থ বলেন, “প্রশ্নপত্রের মধ্যে নানা সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকছে। যদি কেউ আমাদের নিরাপত্তা বলয় ভাঙতে চান, আমরা জানতে পারব কোন পরীক্ষার্থী থেকে সেই চেষ্টা হয়েছে।”
বিতর্কের কেন্দ্রে কমিশনের নীরবতা
প্রশ্নফাঁস রুখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও, দাগিমুক্ত পরীক্ষা নিশ্চিত হবে কি না, সে বিষয়ে নিরুত্তরই রইল কমিশন। ফলে পরীক্ষার আগের দিনেও সংশয় কাটল না পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে।
রবিবার অনুষ্ঠিত হবে নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষা, আর ১৪ সেপ্টেম্বর নেওয়া হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। দুই দফায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার।
পরীক্ষার সময়সূচি ও প্রবেশের নিয়ম
এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরীক্ষার্থীদের সকাল ১০টার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও অ্যাডমিট কার্ডে সময় লেখা আছে সকাল ১১টা পর্যন্ত।
- প্রবেশের শেষ সময় সকাল ১১.৪৫ মিনিট।
- প্রশ্নপত্র সকাল ১০টা থেকে ১০.৩০টার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছবে।
- ১১.৪৫ নাগাদ পরীক্ষার্থীরা হাতে পাবেন প্রশ্নপত্র ও ওএমআর শিট।
- প্রশ্নপত্র খোলা যাবে একমাত্র দুপুর ১২টার পর।
পরীক্ষাকেন্দ্র সংখ্যা
- ৭ সেপ্টেম্বর (নবম-দশম): ৬৩৬টি কেন্দ্র
- ১৪ সেপ্টেম্বর (একাদশ-দ্বাদশ): ৪৭৮টি কেন্দ্র
পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশিকা
- অ্যাডমিট কার্ড বাধ্যতামূলক। এতে বারকোড স্ক্যানার থাকবে, যা নকল চিহ্নিত করবে।
- অ্যাডমিট কার্ডে ছবি বা স্বাক্ষরের সমস্যা থাকলে আসল পরিচয়পত্র ও স্বপ্রত্যয়িত জেরক্স জমা দিতে হবে।
- স্বচ্ছ পেন, স্বচ্ছ জলের বোতল, সাধারণ ঘড়ি ও ফটো আইডি সঙ্গে রাখা যাবে।
- কমিশনের তরফে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য কলম সরবরাহ থাকবে।
আপও পড়ুন: এসএসসি নিয়োগে ৩৫,৭২৬ শূন্যপদ প্রকাশ, নবম-দশমে ২৩,২১২ ও একাদশ-দ্বাদশে ১২,৫১৪
নিষেধাজ্ঞা
- পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন, স্মার্টওয়াচ একেবারেই নিষিদ্ধ।
- শুধু পরীক্ষার্থী নয়, ইনভিজিলেটর, ভেন্যু ইনচার্জ এবং অবজার্ভাররাও হলে মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না।
প্রশ্নফাঁস আটকাতে ব্যবস্থা
এসএসসি জানিয়েছে, প্রশ্নপত্রে বিশেষ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে। কেউ ছবি তোলার বা ফাঁসের চেষ্টা করলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে।
পর্যবেক্ষক ও বিশেষ সুবিধা
- প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকবেন একজন করে অবজার্ভার। সাধারণত প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকারা এই দায়িত্বে থাকবেন।
- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য স্ক্রাইবের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নবম-দশমের জন্য স্ক্রাইবের ন্যূনতম যোগ্যতা একাদশ শ্রেণি পাশ এবং একাদশ-দ্বাদশের জন্য স্নাতক।
- পরীক্ষাকেন্দ্রে আনা দামি জিনিসপত্র রাখার জন্য টোকেন সিস্টেমের ব্যবস্থা থাকবে।
এসএসসি চেয়ারম্যান বলেন, “ আমরা চাই, বহু প্রতীক্ষিত এই পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হোক।”