রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে নেপাল সরকার প্রত্যাহার করল সামাজিক মাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা। সোমবার গভীর রাতে জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী পৃ্থ্বী সুব্বা গুরুং ঘোষণা করেন, জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির উপর থেকে আগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, “Gen-Z প্রজন্মের দাবির প্রেক্ষিতেই সামাজিক মাধ্যম খোলা হয়েছে।”
মঙ্গলবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। পূর্ববর্তী আদেশ প্রত্যাহারের কয়েক ঘন্টা পরেই পুনরায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন অফিস সকাল ৮:৩০ টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ আদেশ জারি করেছে, যা সমগ্র রাজধানী শহর জুড়ে কার্যকর থাকবে।
গত সপ্তাহে নেপাল সরকার ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (পূর্বতন টুইটার), ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, রেডিট, লিঙ্কডইন, পিন্টারেস্ট, সিগন্যাল-সহ ২৫টিরও বেশি প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। কারণ, নতুন নিয়ম অনুযায়ী সংস্থাগুলিকে নেপালে রেজিস্টার করতে বলা হলেও বেশিরভাগ সংস্থা তাতে সাড়া দেয়নি।
বিক্ষোভে যুবক-যুবতীরা রাস্তায় নামেন “Shut down corruption and not social media” স্লোগান তুলে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত ও ৩০০-র বেশি আহত হন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করে সরকার। প্রতিবাদকারীরা সংসদ ভবনের কাছে কাঁটাতারের ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান এবং লাঠিচার্জ করে।

কেন টিকটক বন্ধ হয়নি?
বাকিদের মতো নয়, টিকটকই ছিল একমাত্র বড় অ্যাপ, যা নেপালে সচল ছিল। কারণ, চিনা সংস্থা বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক সময়মতো নেপালে রেজিস্টার করেছে এবং সরকারের নির্দেশ মান্য করেছে। যদিও ২০২৩ সালে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগে টিকটককে নিষিদ্ধ করেছিল নেপাল, তবে ২০২৪ সালের আগস্টে নতুন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
প্রধানমন্ত্রী ওলি বলেছিলেন, “সব সামাজিক মাধ্যমকে সমানভাবে দেখা উচিত।” পরে টিকটকও নেপালের আইন মানতে সম্মত হয়, বিশেষত ২০১৮ সালে প্রণীত পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার আইন। বর্তমানে টিকটকের পাশাপাশি আরও তিনটি প্ল্যাটফর্ম নেপালে রেজিস্টার করে নির্বিঘ্নে চলছে।
রাষ্ট্রসংঘের প্রতিক্রিয়া
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা ঘিরে যে বিক্ষোভে প্রাণহানি ঘটেছে, তার দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।
তবে এখনও পর্যন্ত মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিক) বা ইলন মাস্কের এক্স-এর পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।