Homeপ্রবন্ধবাংলার নববর্ষের সঙ্গে রয়েছে পুণ্যাহের যোগ

বাংলার নববর্ষের সঙ্গে রয়েছে পুণ্যাহের যোগ

প্রকাশিত

মুকুট তপাদার: আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষাটা বাঁচাইয়া রাখছে চাষাভূষা, মুটেমজুর।’ বৈশাখের শুরুতে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের মত একসময় আয়োজন হতো পুণ্যাহ উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল বাংলার কৃষিভিত্তিক মানুষদের। বাংলার এটি একটি বিশেষ উৎসব ছিল। কথায় বলে বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণ। স্বাভাবিকভাবে মানুষ ছোট বড় নানান উৎসব নিয়ে সারা বছর আগ্রহী হন। আনন্দে বানভাসি হয় বঙ্গ ঋতুকে ঘিরে। তবু বলতেই হয় ছোট ছোট অনেক উৎসব আজ পরিবর্তনের পথ ধরেই হারিয়ে যাচ্ছে।

পয়লা বৈশাখের আগের দিন হয় চরক পূজা। মূলত কৃষি প্রধান জায়গা গুলিতে এই পূজা বেশি দেখা যায়। এই উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। ফসল যাতে পর্যাপ্ত ভাবে উৎপন্ন হয় সেই কথা মাথায় রেখে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয়।

আরও পড়ুন। নববর্ষ ও ‘বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস’-এর শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

ছবি:লেখক

ধান রোপনের সময় মরশুমের শুরুতেই সেকালে পুণ্যাহ উৎসব চালু ছিল। নবাবী আমলে এই উৎসবকে ঘিরে ছিল খাওয়া-দাওয়া, খাজনা আদায়, নবাবী পুরস্কার, উপাধি প্রদান ইত্যাদি।

শোনা যায় যে, মুর্শিদকুলি খা পয়লা বৈশাখের সময় রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করেন। এই সময় ধান উঠত খামারে। আর তখনই রাজস্ব আদায়ের দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। সেটাই পুণ্যাহ উৎসব।
তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য রাজস্ব মুকুব করাও হতো। ইংরেজদের দেওয়ানি লাভের পরও মুর্শিদাবাদে এই উৎসব পালিত হতো।

মুর্শিদাবাদের দরবারে এই উৎসব হত। নবাব খুশি হলে সে কালের বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাহায্য নিয়ে প্রজাদের বিভিন্ন উপহার দিতেন। এই সমস্ত অনুষ্ঠানে বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে জমিদাররা মুর্শিদাবাদে আসতেন।

আজকের ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার পদ্ধতিটিকে বলা হয় হালখাতা। বছরের শুরুতে তারা নতুন এই খাতায় হিসেব-নিকাশ লেখা শুরু করেন। সংস্কৃতিতে হাল শব্দের অর্থ হলো লাঙল। আগে কৃষকদের রাজস্ব দিতে সময়মতো অসুবিধা হতো। আকবরের সময় থেকে বাংলা সন চালু হয়। যাকে ফসলি সন বলা হয়। এই দিনটিতে প্রতি বছর কৃষকদের খাজনা দিতে হতো।

ছবি: লেখক

‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুণ্যাহের দিনটি নিয়ে লিখেছিলেন। তিনি শিলাইদহে জমিদারি পরিচালনার সময় এই উৎসব দেখেন। প্রজারা এ সময় নতুন জামা কাপড় পড়ে যে যেমন পারতেন নিজেদের সাধ্যমত বৎসরের খাজনা দিতেন।

বাংলা আর্থিক বছরটাও শুরু মার্চ-এপ্রিলে। এই দিনটিতে ব্যবসায়ীরা লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করেন। আজ একটু একটু করে অনেক কিছুই হারিয়ে যেতে বসেছে। এই দিনটিতে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা প্রকাশ হতো। আজ কিছুটা সেই রেওয়াজ থাকলেও আগের মত আর নেই।

আগেকার মতো ক্যালেন্ডার এর চাহিদা নেই। যারা ক্যালেন্ডার তৈরি করেন সেই সমস্ত মানুষগুলি কাজের অর্ডার পাচ্ছেন না। পয়লা বৈশাখের দিন বিভিন্ন মেলা হত সেগুলিও হারিয়েছে। সঙ এর নাচ গান সেভাবে আর চোখে পড়ে না। উনিশ শতকের কলকাতায় রূপচাঁদ পক্ষীর দল কবেই হারিয়ে গিয়েছে। তবুও নববর্ষ এলে বাঙালির কাছে হাজার স্মৃতি এসে ভিড় করে। সব হারানো ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে সুদিন আসে, বাঙালি মেতে ওঠে নববর্ষকে ঘিরে।

📰 আমাদের পাশে থাকুন

নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

💠 সহায়তা করুন / Support Us

আপনার প্রশ্ন, আমাদের উত্তর

সাম্প্রতিকতম

মোন্থা আপডেট:  কাকিনাড়ায় আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড়, দুর্বল হলেও বৃষ্টি ঝড়ে বিপর্যস্ত একাধিক রাজ্য, বাংলায় কতদিন বৃষ্টি?

গত ২৮ অক্টোবর রাতে কাকিনাড়া উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিমি গতিবেগে উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড়টি। বর্তমানে দুর্বল হলেও দক্ষিণ ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি ও বিপর্যয়ের আশঙ্কা রইল।

এআইএফএফ সুপার কাপ ২০২৫-২৬: মহেশের জাদু জেতাল ইস্টবেঙ্গলকে, মোহনবাগানকে রুখে দিল ডেম্পো  

ইস্টবেঙ্গল এফসি: ৪ (কেভিন সিবিলে, বিপিন সিং ২, হিরোশি ইবুসুকি) চেন্নাইয়িন এফসি: ও মোহনবাগান সুপার...

যে কোনো সময় ভারতের জার্সি গায়ে চাপাতে প্রস্তুত: গুজরাতের পাঁচ উইকেট নিয়ে বাংলাকে জিতিয়ে ঘোষণা শামির  

কলকাতা: ইডেন গার্ডেন্সে রনজি ট্রফির গ্রুপ–সি ম্যাচে মহাম্মদ শামির দুর্দান্ত বোলিংয়ে গুজরাতকে ১৪১ রানে...

আলোচনাসভা ও নাট্যাভিনয়ের মাধ্যমে তৃপ্তি মিত্রের শততম জন্মবার্ষিকী পালন করল ‘বালার্ক নিমতা’

খবর অনলাইন ডেস্ক: বাংলা থিয়েটারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, নির্দেশক ও নাট্যকার তৃপ্তি মিত্রের শততম...

আরও পড়ুন

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ভুলে গিয়েছি অগ্নিস্নাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষকে  

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেননি। বিধানচন্দ্র রায়কে আশীর্বাদও করেননি। বল্লভভাই পটেলের...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ‘এবার তবে আসি মা!’

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় একটা সুবৃহৎ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস এত পক্ষপাতিত্ব করে লেখা হয়েছে, যার উদাহরণ...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: জালিয়ানওয়ালাবাগ ও উধম সিং

সে দিন ব্রিটিশ শাসক অসংখ্য নিরপরাধ ভারতীয় নরনারীকে বুলেটের বন্যায় ধরাশায়ী করেই ক্ষান্ত হয়নি, শহরের গণ্যমান্য নাগরিকদের ঘর থেকে বাইরে টেনে টেনে এনে রাস্তায় হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে ভারতীয়দের নাকে খত দিতে বাধ্য করেছিল ব্রিটিশ শাসক সে দিন।