Homeপ্রবন্ধআরজি কর-কাণ্ডে প্রচারের আলোয় আরএসএস, বিজেপির লাভের সম্ভাবনা

আরজি কর-কাণ্ডে প্রচারের আলোয় আরএসএস, বিজেপির লাভের সম্ভাবনা

প্রকাশিত

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়। যা শুধুমাত্র আর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা- সংকটে সীমাবদ্ধ নয়। এই প্রতিবাদ এখন সর্বজনীন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজ্য সরকারের অব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনার ঢেউ উঠেছে। যা বিরোধী দলগুলির জন্য রাজনৈতিক লাভের সুযোগ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে নজরে পড়ছে, এই ঘটনাকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)- এর প্রচারে উঠে আসার বিষয়টিও।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্য জুড়ে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক মহল সরব হয়েছে। আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, সরকারের তরফ থেকে ঘটনার তদন্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশও এমনটাই মনে করে। সরকারের এই উদাসীনতা নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপারটা আর এমন নয় যে, চিকিৎসক, নার্স, এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু কাজের পরিবেশের দাবিতে পথে নেমেছেন। সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তার দাবি নিয়েই পথে নামছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিজেপি এবং বামফ্রন্টের মত বিরোধীরা নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই । আরএসএস-ও এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাদের সংগঠন আরও মজবুত করার চেষ্টা করছে। আরএসএস-এর কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের প্রচারে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা হচ্ছে এবং পরোক্ষ ভাবে বিজেপির জন্য সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করছেন। আরএসএস-এর এই প্রচারমূলক কাজ সরাসরি বিজেপির রাজনৈতিক সাফল্যে সহায়ক হতে পারে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে সরকারকে লাগাতার আক্রমণ চলছে। কলকাতা থেকে জেলায় জেলায় নিয়মিত প্রতিবাদ কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। সবই স্থানীয় স্তরে। কিন্তু ব্যাপক আকারে এখনও পর্যন্ত যদি কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয়, সেটা হল নবান্ন অভিযান। ডাক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ নামে এক ভুঁইফোড় সংগঠন। নেপথ্যে ছিলেন তিন জন। সরাসরি বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কের কথা না জানালেও তাঁরা নিজেদের আরএসএস বলে পরিচয় দিতে ভোলেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। সমর্থন করেছিল বিজেপি। ওই অভিযানে কয়েকজন পুলিশকর্মীকে রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। আন্দোলনকারীদের মধ্যে নজর কাড়েন এক বৃদ্ধ। তাঁর চমকদার সব পরিচয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। পরে জানা যায়, তিনিও এক সাধারণ মানুষ। তবে তাঁর বিশেষ পরিচয় তিনি শৈশব থেকেই আরএসএস সমর্থক। পুলিশের উদ্দেশে তাঁর সেই চুড়ি পড়ার পরামর্শ দেওয়া ভিডিও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে। মোবাইল মারফত আন্দোলনমুখী যুবসমাজের আইকন হয়ে উঠেছেন নিজেকে আরএসএস সমর্থক হিসাবে দাবি করা ওই বৃদ্ধ।

আরএসএস-এর এই প্রচার এবং বিজেপির তীব্র আক্রমণ তাদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করার একটি কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসেরও দাবি, আরএসএস এবং বিজেপি পরিকল্পিতভাবে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং এই ধরনের কৌশল ব্যবহার করে তারা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মতে, রাজ্যে বিজেপি তার রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর জন্য এই ধরণের ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করছে এবং সাধারণ মানুষের আসল সমস্যাগুলি থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে দিতে চাইছে। বামেরাও যে শাসকদলের নিশানায় থাকছে, সেটা নতুন করে না বললেও হয়।

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, বিভিন্ন কৌশলে রাজ্যে শক্তি বাড়াতে তৎপর বিজেপি। বাংলার রাজনৈতিক আবহাওয়ার সঙ্গে কিছুটা খাপ খাইয়ে নিয়ে আরএসএস-এর প্রচারে উঠে আসাটাও তারই একটি অঙ্গ হতে পারে। বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে ধর্মনিরপেক্ষতা সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থেকেছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বামপন্থীদের দীর্ঘ শাসন—সব ক্ষেত্রেই বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতার স্পষ্ট প্রভাব দেখা গিয়েছিল। বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখার নীতি বামপন্থী শাসনকালে বিশেষ ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু, অতি সম্প্রতি আরএসএস-এর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং বিজেপির উত্থান বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে একটি নতুন সম্ভাবনার পূর্বাভাস হতে পারে।

বাংলায় বামপন্থী রাজনীতির প্রভাব থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আরএসএস-এর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। বাংলায় বিজেপির রাজনৈতিক সাফল্য অনেকাংশে আরএসএস-এর নিরন্তর প্রচারের ফলাফল। আরএসএস সরাসরি রাজনীতিতে অংশ না নিলেও তারা তাদের আদর্শ ভিত্তিকে ব্যবহার করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করছে। তবে, নির্দিষ্ট করে বললে, আরজি করকে সামনে রেখে এই প্রতিবাদ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং তা রাজ্যের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তার উপরেই নির্ভর করছে বিজেপির সাফল্যের সম্ভাবনা।

আপনার প্রশ্ন, আমাদের উত্তর

সাম্প্রতিকতম

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে ছাত্রীকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার, মৃত ঘোষণা হাসপাতালের

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের মাঝে পুকুর থেকে উদ্ধার হল ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের দেহ। ঘটনার পর ফের সিসিটিভি ও পুলিশ আউটপোস্টের দাবি তুলল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, পাল্টা দিল এসএফআই।

কলকাতায় সাউথ সিটি মলে স্কেচার্সের নতুন স্টোর উদ্বোধন করলেন কার্তিক আরিয়ান

কলকাতার সাউথ সিটি মলে নতুন স্টোর খুলল স্কেচার্স। উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর কার্তিক আরিয়ান। কমিউনিটি গোল চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে কেল ফাউন্ডেশনে শিশুদের জন্য জুতো দান করল সংস্থা।

পুজোর আগে সুখবর, সরকারি কর্মীদের জন্য এলটিসি-এইচটিসির মেয়াদ বাড়ল এক বছর

রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন। এলটিসি ও এইচটিসির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হল। আগামী এক বছরের মধ্যে যাঁরা সুবিধা নিতে পারেননি, তাঁরা তা ব্যবহার করতে পারবেন।

কবি সুভাষের পর শহিদ ক্ষুদিরামেও পরিষেবা কমল, পুজোর মুখে বিপাকে মেট্রো যাত্রীরা

দক্ষিণ কলকাতার শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে মেট্রো পরিষেবা কমানোর সিদ্ধান্ত নিল কর্তৃপক্ষ। কবি সুভাষ স্টেশনে সংস্কারের কাজ চলায় আগেই বন্ধ ছিল পরিষেবা। বৃহস্পতিবার লাইনের গণ্ডগোলে অর্ধঘণ্টা বন্ধও থাকল মেট্রো।

আরও পড়ুন

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ভুলে গিয়েছি অগ্নিস্নাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষকে  

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেননি। বিধানচন্দ্র রায়কে আশীর্বাদও করেননি। বল্লভভাই পটেলের...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ‘এবার তবে আসি মা!’

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় একটা সুবৃহৎ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস এত পক্ষপাতিত্ব করে লেখা হয়েছে, যার উদাহরণ...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: জালিয়ানওয়ালাবাগ ও উধম সিং

সে দিন ব্রিটিশ শাসক অসংখ্য নিরপরাধ ভারতীয় নরনারীকে বুলেটের বন্যায় ধরাশায়ী করেই ক্ষান্ত হয়নি, শহরের গণ্যমান্য নাগরিকদের ঘর থেকে বাইরে টেনে টেনে এনে রাস্তায় হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে ভারতীয়দের নাকে খত দিতে বাধ্য করেছিল ব্রিটিশ শাসক সে দিন।