শুক্রবারও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার সূচক সেনসেক্স ও নিফটি বড় পতনের মুখে পড়েছে। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম কারণটি হল মার্কিন বাজারে রাতভর ধস। মার্কিন শেয়ারবাজারে এই পতনের অন্যতম কারণ হল প্রত্যাশার তুলনায় বেশি বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং ওয়ালমার্ট-এর দুর্বল ভবিষ্যদ্বাণী। পাশাপাশি, চিনের শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়া এবং ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্রমাগত বহিঃপ্রবাহও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক নীতি পুনর্বহাল হলে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে ধাক্কা দেবে। ভারতে কর্পোরেট আয়ও আশানুরূপ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের শেয়ারবাজারের তুলনামূলক উচ্চ মূল্যায়ন, যা অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে, গত ১৫টি লেনদেনের মধ্যে ১৩ দিনই বাজার নিম্নমুখী থেকেছে।
বাজারের পতনের ৫টি প্রধান কারণ:
1️⃣ ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আমদানির উপর পাল্টা শুল্ক বসানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়তে পারে। বিশেষ করে ফার্মা ও অটোমোবাইল শিল্পের জন্য এটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা মার্কিন রফতানির উপর নির্ভরশীল।
2️⃣ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লাগাতার শেয়ার বিক্রি
বৃহস্পতিবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলি (FII) ভারতীয় বাজার থেকে ৩,৩১১ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছে। চলতি বছরে মোট বহিঃপ্রবাহ প্রায় ৯৮,২২৯ কোটি টাকাতে পৌঁছেছে। এর ফলে বিশেষ করে বড় সংস্থাগুলির শেয়ার দরে চাপে পড়েছে।
3️⃣ ভারতের তুলনায় চিনের বাজার বেশি আকর্ষণীয়
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সেখানে বিনিয়োগের নতুন তরঙ্গ তৈরি হয়েছে। হংকংয়ের হ্যাং সেন সূচক ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ভারতের বাজার থেকে তহবিল সরিয়ে নিচ্ছে এবং বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে।
4️⃣ বাড়ছে অপরিশোধিত তেলের দাম, উদ্বেগ মুদ্রাস্ফীতিতে
রাশিয়ার সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ভারত তেল আমদানির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি ও মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় ফেলছে।
5️⃣ মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদ কমানোর আশা কমছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা যাওয়ায় ২০২৫ সালে সুদের হার একাধিকবার কমানোর সম্ভাবনা কমছে। ফেডারেল রিজার্ভ এখন মাত্র দুটি সুদ হ্রাসের ইঙ্গিত দিয়েছে, যা বৈশ্বিক লিক্যুডিটি সংকুচিত করতে পারে এবং উদীয়মান বাজারগুলির জন্য নেতিবাচক হতে পারে।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি
শুক্রবার, সেনসেক্স ৪২৪.৯০ পয়েন্ট (-০.৫৬ শতাংশ) কমে ৭৫,৩১১.০৬-এ নেমেছে। নিফটি ফিফটি ১১৭.২৫ পয়েন্ট (-০.৫১ শতাংশ) কমে ২২,৭৯৫.২৫-এ দাঁড়িয়েছে।