ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সই হওয়া ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নতুন দিগন্তের সূচনা করল। এই চুক্তির ফলে ভারতের ৯৯ শতাংশ রফতানি পণ্য এখন থেকে যুক্তরাজ্যে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। যার জেরে বর্তমানে ৫ লক্ষ কোটি টাকার (৬০ বিলিয়ন ডলার) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা (১২০ বিলিয়ন ডলার)।
বস্ত্র শিল্পে জোয়ার
এই চুক্তির সবথেকে তাৎক্ষণিক সুফল মিলেছে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে। এতদিন ভারতীয় রফতানিকারকরা যেখানে যুক্তরাজ্যে ১০-১২% শুল্ক দিতে বাধ্য হতেন, সেখানে এখন পুরোপুরি শুল্কমুক্ত সুবিধা মিলবে। যার ফলে বাংলাদেশের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধা অনেকটাই কেটে যাবে।
বর্তমানে ভারত যুক্তরাজ্যে মাত্র ₹১৪,৯৪০ কোটি (১.৭৯ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের বস্ত্র রফতানি করে, যেখানে ইউকে-র বস্ত্র আমদানির বাজার প্রায় ₹২,২৪,০০০ কোটি (২৬.৯৫ বিলিয়ন ডলার)— স্পষ্টতই বিশাল সুযোগ অপেক্ষা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বস্ত্র রফতানি আগামী ৫-৬ বছরে দ্বিগুণ হতে পারে।
ফার্মাসিউটিক্যাল ও রসায়ন খাতেও বাম্পার লাভ
- ভারতের জেনেরিক ওষুধ ইতিমধ্যেই ব্রিটেনে সস্তা এবং মানসম্পন্ন বলে জনপ্রিয়। এখন শুল্কমুক্ত সুবিধায় তাদের প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
- রসায়ন খাতে রফতানি ৩০-৪০% পর্যন্ত বেড়ে ₹৫,৪০০–৬,২০০ কোটি (৬৫০-৭৫০ মিলিয়ন ডলার)-তে পৌঁছতে পারে ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে।
প্রযুক্তি খাতে উল্লম্ফন
ভারতীয় সফটওয়্যার ও IT পরিষেবায় যেহেতু ব্রিটেনের ওপর বড় নির্ভরতা রয়েছে, এই চুক্তি সেই নির্ভরতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
- বর্তমানে এই খাতের রফতানি মূল্য ₹২,৬৪,০০০ কোটি (৩২ বিলিয়ন ডলার)।
- ১৫-২০% বার্ষিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
ইলেকট্রনিক্স, স্মার্টফোনেও নতুন দরজা খুলছে
- স্মার্টফোন, অপটিক্যাল ফাইবার, ইনভার্টার ইত্যাদি পণ্যে শুল্ক উঠে যাওয়ায় ইলেকট্রনিক্স রফতানিতেও বড় গতি আসবে।
হুইস্কি আমদানিতে শুল্ক কমানোয় লাভে ভারতীয় ব্র্যান্ডও
- স্কচ হুইস্কির উপর আমদানি শুল্ক ১৫০% থেকে ধাপে ধাপে ৪০%-এ নামবে ১০ বছরের মধ্যে।
- এতে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি হওয়া স্কচ সস্তা হবে, কিন্তু একইসঙ্গে United Spirits বা অন্য ভারতীয় মদ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও লাভবান হবে, কারণ তারা স্কচ আমদানির উপর নির্ভরশীল।
রত্ন ও গয়না, কৃষিক্ষেত্রেও বড় সম্ভাবনা
- বর্তমানে ভারতের রত্ন ও গয়না রফতানি ₹৭,৮৪০ কোটি (৯৪১ মিলিয়ন ডলার)।
লক্ষ্যমাত্রা: আগামী ২-৩ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করা। - কৃষিপণ্য রফতানি ৩ বছরে ২০% পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফল, সবজি, মশলা, সিরিয়াল, প্রসেসড ফুড— সবই শুল্কমুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
ড. ভি কে বিজয়কুমার, চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট, Geojit:
“এফটিএ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি প্রমাণ করে ভারত ফ্রি ট্রেডের প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অগ্নেশ্বর সেন, EY ইন্ডিয়া:
“এটি কেবল বাণিজ্য নয়— ভারত প্রথমবার একটি বড়ো উন্নত অর্থনীতির সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে যাচ্ছে। এটা ভবিষ্যতের জন্য সাহসী পদক্ষেপ।”
বহু প্রতীক্ষিত ভারত-ইউকে FTA কেবল পণ্য নয়, পরিষেবার বাণিজ্য, পেশাদার ভিসা নীতিতেও পরিবর্তন আনবে। বস্ত্র, ফার্মা, প্রযুক্তি, গয়না ও কৃষি খাতের পাশাপাশি এটি ভারতের বিশ্ব বাণিজ্যে অবস্থানকেও শক্তিশালী করবে।
আরও পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়ল ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, দেরি করলে কত জরিমানা?