“মিউচ্যুয়াল ফান্ডে মাসে ₹১০,০০০ বিনিয়োগ করুন, ৩০ বছরে পাবেন ₹৩ কোটি!”—এই প্রতিশ্রুতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। অনেকেই এটিকে অবসর জীবনের ‘ম্যাজিক নম্বর’ হিসেবে প্রচার করছেন। কিন্তু মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ পরামর্শদাতা বরুণ বৈদ এই গাণিতিক হিসাবকে বাস্তবতার সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, “এটা অর্ধসত্য, এবং অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর।”
এক্স (Twitter)-এ পোস্ট করে বৈদ জানান, অনেক ফিনফ্লুয়েন্সার ভুলভাবে দাবি করছেন যে, কমিশনের কারণে বিনিয়োগকারীরা “কোটি টাকার ক্ষতি” করেন।
তাঁর কথায়, “অনেকে মনে করেন ১% কমিশন মানে ৩০ বছর শেষে পুরো করপাস থেকে কোটি টাকা কেটে নেওয়া হবে। এটা ভুল গণিত।”
‘শেষ করপাস’ বা Final Corpus আসলে কী?
বৈদ ব্যাখ্যা করেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের শেষে আপনি যে মোট টাকাটা হাতে পান—মূলধন ও মুনাফা মিলিয়ে—তাকেই বলে শেষ করপাস (Final Corpus)।
উদাহরণ হিসেবে—
- আপনি প্রতি মাসে ₹১০,০০০ বিনিয়োগ করলেন ৩০ বছর ধরে।
- যদি গড় বার্ষিক রিটার্ন হয় ১২%, তবে আপনি মোট ₹৩ কোটি পাবেন।
এই ₹৩ কোটি হল আপনার Final Corpus, অর্থাৎ বিনিয়োগের শেষে হাতে পাওয়া সম্পূর্ণ টাকার অঙ্ক।
তাহলে কমিশনের ভূমিকাটা কী?
বরুণ বৈদের মতে, কমিশন কখনওই পুরো করপাসের উপর একবারে ধার্য হয় না।
- প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ (প্রথম দিকে প্রায় ১%, পরে ০.২৫% বা তার কম) কেটে নেওয়া হয়।
- সময়ের সঙ্গে কমিশন কমতে থাকে।
- ফলে ৩০ বছরে মোট কমিশনের অঙ্ক হয় কয়েক লক্ষ টাকার মধ্যে, কোটি নয়।
“বাস্তবে কোনও ডিস্ট্রিবিউটারই ৩০ বছর ধরে আপনার পুরো পোর্টফোলিওর উপর ১.৫% কমিশন পান না,” — এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন বৈদ।
আসল ক্ষতি কোথায় হয়?
বরুণ বৈদ জানান, বিনিয়োগের প্রকৃত ক্ষতি হয় ইনফ্লেশন এবং ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের কারণে।
যদি কোনও মিউচুয়াল ফান্ড ১২% বার্ষিক রিটার্ন দেয়ও—
- ৬% ইনফ্লেশন এবং ট্যাক্স বাদ দিলে প্রকৃত রিটার্ন নেমে আসে প্রায় ৫-৬%-এ।
- ফলে ৩০ বছর শেষে ₹৩ কোটি টাকার আজকের মূল্যে ক্রয়ক্ষমতা থাকে মাত্র ₹৪০–₹৪৫ লক্ষের মতো।
অর্থাৎ, সংখ্যাটা বড় হলেও টাকার বাস্তব শক্তি অনেকটাই কমে যায়।
কেন এই ভুল বোঝাবুঝি?
কারণ, অনেকেই মিউচুয়াল ফান্ডের ঘোষিত রিটার্নের অঙ্ককে “কমিশন বাদে” হিসাব করেন না।
কিন্তু বাস্তবে—
- ফান্ডের ঘোষিত ১২% রিটার্নের মধ্যেই সব খরচ, ব্যয় ও কমিশন অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- তাই আসল রিটার্ন সাধারণত ১১–১১.৫% এর মধ্যে হয়।
এ অবস্থায় “কমিশনে কোটি টাকা ক্ষতি” বলা গাণিতিকভাবে ভুল, বলেন বৈদ।
বরুণ বৈদের বার্তা
“অতি সরলীকৃত বা ভয়ভিত্তিক গণনা মানুষকে ভুল সিদ্ধান্তে ঠেলে দেয়। বিনিয়োগ মানে ধৈর্য, বাস্তবতা, আর ইনফ্লেশন বোঝা।”
তিনি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন—
- ডাইরেক্ট প্ল্যান ও ট্যাক্স-অপ্টিমাইজড ইনভেস্টমেন্ট বিবেচনা করতে,
- নিয়মিত ডিসিপ্লিনড SIP চালিয়ে যেতে,
- এবং কমিশন নয়, ইনফ্লেশন ও ট্যাক্সের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করতে।
বরুণ বৈদের মতে, বিনিয়োগের আসল শত্রু কমিশন নয়—অজ্ঞতা, ইনফ্লেশন, আর ভুল গণনা। দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ গঠনের জন্য প্রয়োজন জ্ঞান, ধৈর্য এবং বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা।