খবর অনলাইন ডেস্ক: উত্তর কলকাতার বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়ির পুজো এ বার ১৪২তম বছরে পড়ল। এই দত্তবাড়ির পুজো শুরু করেছিলেন শ্যামলধন দত্ত ১৮৮২ সালে। আজও প্রাচীন প্রথা মেনে একই ভাবে দুর্গাপুজো করে চলেছে এই বনেদি পরিবারটি।
কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর কথা বললেই দুটি দত্তবাড়ির কথা উঠে আসবেই। একটি হাটখোলা দত্তবাড়ি এবং আরও একটি বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়ি। আদতে বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা শ্যামলধন দত্ত হাটখোলা দত্তবাড়িরই ছেলে। ১৮৮২ সালে বলরাম দে স্ট্রিটে বাড়ি কিনে, সে বাড়ির ঠাকুরদালানে তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই দত্তবাড়ি আজও প্রাচীন প্রথা মেনে একই ভাবে দুর্গাপুজো করে চলেছে।
গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটাপথ বলরাম দে স্ট্রিট। সব বনেদি বাড়িতেই পুজো শুরু করার একটা কাহিনি থাকে। এই দত্তবাড়ির ক্ষেত্রেও সে রকম এক কাহিনি আছে। শ্যামলধন দত্ত ছিলেন হাইকোর্টের আইনজীবী। ছোটো মেয়ে রাজলক্ষ্মী দেবীর পুত্রসন্তান হওয়ার আনন্দেই তিনি এই দুর্গাপুজো শুরু করেন।
দত্তবাড়ির প্রতিমার কয়েকটি বিশেষত্ব আছে। এর চালচিত্র তৈরি হয় মঠচৌড়ি আদলে অর্থাৎ তিনচালি। এই প্রতিমার সিংহ অশ্বমুখী। প্রতিমার শাড়ি বাড়িতে আঁকা হয়। শাড়ির আঁচল বাড়িতেই রং-তুলি দিয়ে আঁকা হয়। দুর্গা-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ-অসুরের সমস্ত অস্ত্র রুপোর ও আর দেব-দেবীর সব গহনা সোনার।
উলটোরথের দিন কাঠামোপুজো করা হয়। আর তখন থেকেই শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। কৃষ্ণানবমীর দিন মন্দিরে ঘট বসানো হয়। সে দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় চণ্ডীপাঠ। দুর্গাপুজোর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী, তিন তিথিতেই কুমারীপুজো হয়। শুধু তা-ই নয়, কুমারীপুজোর পাশাপাশি এই তিন দিন সধবাপুজোও করা হয়।
প্রথা মেনে ষষ্ঠী ও অষ্টমীর দিন এই বাড়িতে নিরামিষ রান্না হয়। এ বাড়ির পুজোয় অন্নভোগের রীতি নেই। সাত রকমের শুকনো ভোগের নিয়ম। নিমকি, লেডিকেনি, গজা, নারকেলনাড়ু, লুচি, রাধাবল্লভী, খাস্তা কচুরি এমন সাত রকমের ভোগ রান্না করে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। পুজোর প্রতি দিন সকাল ও রাতে দেবীকে এই সাত রকমের ভোগ দেওয়া হয়।
এই পুজোর সব কাজই করেন ব্রাহ্মণরা। দশমীর দিন দরিদ্রদের সেবা করার নিয়ম এখনও অব্যাহত আছে। এক সময় পর্যন্ত বলিপ্রথা ছিল। কিন্তু এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ক্ষীরের পুতুল বানিয়ে বলি দেওয়ার চল আছে। আর বিসর্জনের দিন কাঁধে করে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিরঞ্জনের জন্য। এ ভাবেই ঐতিহ্য ও ধারা বজায় রেখে, সব রকম প্রথা ও বিধি মেনে দুর্গাপুজো করে চলেছেন দত্তবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম।
ছবি: বলরাম দে স্ট্রিট দত্তবাড়ি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
আরও পড়ুন:
আগমনী গান গেয়ে মা দুর্গার আবাহন করা হয় বড়জোড়ার গুপ্ত পরিবারে
হুগলির জোলকুলের ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপুজোর এ বার ২১৯ বছর
স্বদেশির গন্ধমাখা উত্তরপাড়া চ্যাটার্জিবাড়ির ৩০২ বছরের দুর্গাদালান