Home দুর্গাপার্বণ একবার গদাই এঁকে দিয়েছিলেন কামারপুরের লাহাবাড়ির মা দুর্গার চোখ  

একবার গদাই এঁকে দিয়েছিলেন কামারপুরের লাহাবাড়ির মা দুর্গার চোখ  

0
লাহাবাড়ির দুর্গাপূজা।

খবর অনলাইন ডেস্ক: হুগলির কামারপুরের লাহা পরিবার বাঙালির কাছে খুবই পরিচিত নাম। জমিদারের অত্যাচারে দেড়ে গ্রাম ছেড়ে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তথা গদাধরের পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় যখন কামারপুকুরে এসে বসতি স্থাপন করেন তখন তাঁর পাশে বন্ধুর মতো দাঁড়িয়েছিলেন লাহাবাড়ির ধর্মদাস লাহা।

লাহাবাড়ির দুর্গাপুজো ঠিক কোন সময়ে শুরু হয়েছিল তা জানা যায় না। তবে এই দুর্গাপুজো নতুন করে শুরু হয়েছিল ধর্মদাস লাহারই হাত ধরে। আর এই লাহাবাড়ির পুজোতেই মাতৃপ্রতিমায় চক্ষুদান করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। তখনও তিনি অবশ্য শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব হননি, তখনও তিনি গদাধর চট্টোপাধ্যায় তথা গদাই। একবার কোনো কারণে ঠাকুর রঙ করার কারিগর না আসায় গদাইকেই মা দুর্গার চোখ আঁকতে হয়েছিল। ছবি আঁকায় গদাই ছিলেন বেশ পটু। তাঁর নিপুণ হাতের গুণেই মায়ের চক্ষুদান হয়েছিল।

ধর্মদাসবাবুর আমলে পুজো কী ভাবে ফের চালু হল তার একটি কাহিনি আছে। চুঁচুড়া আদালতে জমিজমা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে ধর্মদাস লাহা চলেছেন গ্রামের মেঠোপথ ধরে। ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিতে নিতে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে মা তাঁকে বলেন, “মামলায় জয়ী হবি তুই, বাড়ি গিয়ে আমার পুজো শুরু করিস। খানাকুল থেকে দু’জন পটুয়া যাচ্ছে।”

মামলায় সত্যিই জিতে যান ধর্মদাস এবং সেই আনন্দে মায়ের স্বপ্নাদেশের কথাও ভুলে যান। কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখেন খানাকুল থেকে দুই প্রতিমাশিল্পী হাজির। তাঁরা ধর্মদাসবাবুকে বলেন, “একটি মেয়ে এসে আমাদের বললে, এখানে দুর্গাপ্রতিমা গড়তে হবে। তাই আমরা এসেছি।” সেই থেকেই শুরু লাহাবাড়ির দুর্গাপুজো। পুজো শুরু হওয়ার কয়েক বছর পরে এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।

লাহাবাড়ির দুর্গাপূজার কাঠামোপুজো হয় বিপত্তারিণী পুজোর দিন এবং ঘট উত্তোলন হয় মহালয়ার পরের দিন। প্রতিপদের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় মহাচণ্ডীর পুজো। আর এই পুজোর আরেকটি আকর্ষণ যাত্রাপালা। মহালয়ার দিন শুরু হয়ে এই যাত্রাপালা অনুষ্ঠান আট দিন ধরে চলে। যাত্রাশিল্পীরা বলেন, মা দুর্গার কাছে প্রথম যাত্রাপালার অনুষ্ঠান করলে সারা বছর তাঁদের খুব ভালো ভাবে কাটে।

লাহা পরিবারের সূত্রে জানা গেল, ঘট স্থাপনের দিন থেকে পুরোহিত মশাই মন্দিরেই থাকেন। বিভিন্ন কাজের সূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন তাঁরা সবাই পুজোর দিনগুলিতে বাড়িতে আসেন। পুজোর দিনগুলোয় বাড়ির সকলেই মন্দিরের প্রসাদ গ্রহণ করেন। নবমীর দিন এখানে কুমারীপূজা হয়। এ ভাবেই ইতিহাসকে স্মরণ করে সব রকম প্রথা বজায় রেখে আজও হয়ে আসছে কামারপুকুরের লাহাবাড়ির দুর্গাপুজো।

আরও পড়ুন

ভট্টাচার্য বংশের ‘মঠের বাড়ির দুর্গোৎসব’-ই সিঙ্গি গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা

জমিদারি চলে গেলেও ঐতিহ্য হারায়নি জয়নগর মিত্রবাড়ির ৩০০ বছরের পুজোর

 ১৪২ বছর ধরে সব প্রথা মেনে পুজো হয়ে আসছে বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়িতে

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version