ভারতের প্রথম আইআইটি খড়গপুর এবার চিকিৎসা শিক্ষার জগতে বড় পদক্ষেপ করতে চলেছে। এনএমসি (National Medical Council)-র অনুমোদন পেলেই শুরু হবে পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্তরের এমডি (Doctor of Medicine) কোর্স। এটি হবে আইআইটি খড়গপুরের প্রথম আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা শিক্ষা কর্মসূচি, যা ভবিষ্যতে এমবিবিএস কোর্সের পথও খুলে দিতে পারে।
সূত্র অনুযায়ী, প্রথম দফায় ২০টি আসন রাখা হবে এই এমডি কোর্সের জন্য। পড়াবেন আইআইটি খড়গপুরে সম্প্রতি নিযুক্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। ক্লাস হবে ড. বিসি রায় মেডিক্যাল কলেজে, যা বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধানচন্দ্র রায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত। তিনিই এই জমি দান করেছিলেন ভারতের প্রথম আইআইটি গঠনের জন্য।
এমডি পড়ুয়াদের প্র্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ হবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ-এ। এটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের বাইরে বলারামপুরে অবস্থিত। ১৮ একর জমিতে তৈরি এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি শুধু আইআইটি জন্য নয়, আশপাশের জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবার জন্যও এক নতুন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে।

চিকিৎসা শিক্ষার এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে, যখন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আব্দুল কালাম ড. বিসি রায় মাল্টি-স্পেশালিটি মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তখন লক্ষ্য ছিল একটি এমবিবিএস কলেজ ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা।
চিকিৎসা শিক্ষার পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ড. বিসি রায় মেডিক্যাল কলেজ এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল-এ। যদিও প্রাথমিকভাবে পরিকল্পিত ১০০ আসনের এমবিবিএস কোর্স এখন স্থগিত, আইআইটি খড়গপুর ধীরে ধীরে চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
সম্প্রতি হাসপাতালটির নতুন অপারেশন থিয়েটারে প্রথম সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন সিনিয়র সার্জন ড. আর. কে. বেহেরা। হাসপাতালটি ধীরে ধীরে ২২০ বেডের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে, যেখানে আইআইটির ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মী এবং স্থানীয় মানুষ সকলেই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবেন।
এখন আইআইটি খড়গপুর অপেক্ষায় আছে এনএমসি-র অনুমোদনের। অনুমোদন মিললেই শুরু হবে দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা শিক্ষার নতুন অধ্যায়।
এই উদ্যোগটি শুধু আইআইটি খড়গপুরের ইতিহাসেই নয়, ভারতের চিকিৎসা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণাকে একত্রিত করে এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান।