নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি ছিলেন টলিউডের বিখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার। অথচ তাঁকে আপামর বাঙালি চেনে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাটোগ্রাফার হিসাবে। সেই সিনেমাটোগ্রাফার সৌম্যেন্দু রায় প্রয়াত হলেন ৯০ বছর বয়সে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বালিগঞ্জে তাঁর নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধ্যক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ ছবির সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন সুব্রত মিত্র। সেই ছবিতেই ক্যামেরা কেয়ারটেকার হিসাবে সুব্রতবাবুর ইউনিটে যোগ দিয়ে টলিপাড়ায় কাজ শুরু সৌম্যেন্দু রায়ের। ১৯৬০ সালে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ তথ্যচিত্র নির্মাণের সময় সত্যজিৎ রায় তাঁকে ক্যামেরার দায়িত্ব দেন। এর পর থেকেই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গভীর ভাবে দানা বাঁধতে থাকে। ১৯৯২ সালে সত্যজিতের প্রয়াণ পর্যন্ত তাঁদের সম্পর্ক অটুট ছিল।
টলিপাড়ায় সৌম্যেন্দু রায়ের কাজ
সত্যজিত রায়ের ২১টি ছবির সিনেমাটোগ্রাফার সৌম্যেন্দু রায়। তাঁর যে সব ছবিতে ক্যামেরার দায়িত্ব ছিল সৌম্যেন্দুর তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তিন কন্যা’, ‘অভিযান’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ইত্যাদি। সত্যজিৎ রায় ছাড়াও তপন সিংহ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবিতেও ক্যামেরার দায়িত্ব পালন করেছেন সৌম্যেন্দু রায়।
‘পথের পাঁচালী’ ছবিতে সত্যজিৎ রায় এবং সুব্রত মিত্রের সঙ্গে কাজ করছেন সৌম্যেন্দু রায়। সৌম্যেন্দুবাবুর কাছ থেকে এই ছবি সংগ্রহ করেছিলেন রাজীব বসু।
সত্যজিৎ রায় তাঁকে ডাকতেন ‘রায়’ নামে। আর সত্যজিৎ প্রসঙ্গে কোনো কথা উঠলেই সৌম্যেন্দু রায় বলতেন, ‘‘মানিকদা ছিলেন মাই ডিয়ার মানুষ।’’ অবিবাহিত সৌম্যেন্দু রায় একাই থাকতেন। সঙ্গী ছিলেন দুই পরিচারক। ২০০০ সাল থেকে সেই ভাবে আর ক্যামেরার কাজ করেননি। তবে বিভিন্ন সংস্থায় ছাত্রদের চলচ্চিত্র বিষয়ক পাঠ দিয়েছেন। পেয়েছেন দেশ-বিদেশের একাধিক সম্মান।
মুখ্যমন্ত্রীর শোকপ্রকাশ
সৌম্যেন্দু রায়ের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘বিশিষ্ট সিনেমাটোগ্রাফার সৌম্যেন্দু রায়ের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি রূপকলা কেন্দ্রের উপদেষ্টা ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে ‘বিশেষ চলচ্চিত্র পুরস্কার’ ও ২০১৫ সালে ‘চলচ্চিত্র পুরস্কার’ (সারা জীবনের অবদান) প্রদান করে। এ ছাড়া তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-সহ বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।’’
সৌম্যেন্দু রায়ের প্রয়াণে বুধবার টলিপাড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এ দিন সন্ধ্যায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গৌতম ঘোষ, হরনাথ চক্রবর্তী, অভিজিৎ গুহ, সুদেষ্ণা রায়, প্রেমেন্দুবিকাশ চাকীর মতো বিশিষ্ট পরিচালকরা। হাজির ছিলেন চলচ্চিত্রজগতের সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ।