অরূপ চক্রবর্তী, গুয়াহাটি: অসমের কণ্ঠ, অসমিয়ার প্রাণ শিল্পী জুবিন গার্গ আর নেই। সিঙ্গাপুরে নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে যোগদানের সফরে গিয়ে শুক্রবার স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সমুদ্রের নিচে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা আর বাঁচাতে পারেননি। প্রায় এক ঘণ্টা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ঘোষণা করা হয়।
সিঙ্গাপুর সরকার ভারতের বিদেশমন্ত্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে খবর জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী পবিত্র মার্ঘেরিটা জানিয়েছেন, মরদেহ দ্রুত অসমে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি সরাসরি উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়া অন্যান্য শিল্পী ও প্রতিনিধিদেরও দেশে ফেরানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
অসম ও উত্তর-পূর্বে শোকের ছায়া
খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসমসহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নেমে এসেছে গভীর শোক। সামাজিক মাধ্যমে হাজার হাজার ভক্ত শ্রদ্ধা ও শোকবার্তা জানাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, গানের জাদুতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করা এক সাংস্কৃতিক নক্ষত্রকে হারাল অসম।
জীবন ও সঙ্গীতযাত্রা
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর গুয়াহাটীতে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন গার্গ। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল প্রবল। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় প্রকাশিত আনামিকা অ্যালবাম তাঁকে রাতারাতি জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করে। পরপরই আসে অভিজিত, স্নেহবন্ধন, মায়াবিনীর মতো অ্যালবাম—যা আজও সমান জনপ্রিয়। অসমীয়া সংগীতকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তিনি বাংলা ও হিন্দি গানেও সমান সাফল্য অর্জন করেন। বলিউডে তাঁর “ইয়া আল্লাহ” (গ্যাংস্টার ছবির গান) কিংবা “ক ক ক কিরণ” তাঁকে সর্বভারতীয় পরিচিতি এনে দেয়।
বহুমুখী প্রতিভা
গায়ক ছাড়াও তিনি ছিলেন সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক। তাঁর কণ্ঠ ও সুরে সজ্জিত একাধিক চলচ্চিত্র আজও দর্শক-শ্রোতার মনে অমলিন। পাশাপাশি, পরিবেশ সংরক্ষণ, শিক্ষা বিস্তার ও সামাজিক সম্প্রীতির মতো বিষয়ে গান ও উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি।
অসমের সাংস্কৃতিক দূত
জুবিন গার্গ শুধু গায়ক নন, ছিলেন উত্তর-পূর্ব ভারতের এক সাংস্কৃতিক দূত। তাঁর গান সীমান্ত অতিক্রম করে তৈরি করেছিল এক অদৃশ্য বন্ধন। তরুণ থেকে প্রবীণ—সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
অসমে শোকের আবহ
গুয়াহাটী শহরের বিভিন্ন স্থানে ভক্তরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমবেত হয়ে তাঁর ছবিতে ফুল অর্পণ করছেন। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো স্মরণসভা ও প্রার্থনার আয়োজন করেছে। সামাজিক মাধ্যমে #WeMissYouZubeen এবং #ZubeenGargLivesOn ট্রেন্ড করছে।
অপূরণীয় ক্ষতি
অসম তথা সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক আকাশে জুবিন গার্গ ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর হঠাৎ প্রয়াণে অসম এক অমূল্য কণ্ঠ হারাল। তবে ভক্তদের বিশ্বাস, তাঁর গান, তাঁর সুর এবং তাঁর শিল্পসত্তা চিরকাল অম্লান থেকে যাবে।