সাপের পর এ বার নয়া প্রজাতির ব্যাঙের নাম রাখা হয়েছে পরিবেশপ্রেমী হলিউড অভিনেতা লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিওর নামে। অস্কারজয়ী অভিনেতা ওতপ্রোত ভাবে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে নয়া প্রজাতির ব্যাঙের হদিশ মিলেছে। সেই ব্যাঙের নয়া প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে ফিলোনাসতেস ডিক্যাপ্রিওই (Phyllonastes Dicaprioi)।
ইকুয়েডরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োডাইভারসিটি, ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি অফ ইকুয়েডর ও সান ফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটি অফ কুইটোর বিজ্ঞানীরা ৭টি নয়া প্রজাতির ব্যাঙের খোঁজ পেয়েছেন। তার মধ্যে ফিলোনাসতেস ডিক্যাপ্রিও অন্যতম। ইকুয়েডরের এল ওরো প্রদেশে পশ্চিম পাহাড়ি অঞ্চলে এই প্রজাতির ব্যাঙকে দেখা যায়। গায়ে ধূসর রঙের ছিটছিট দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩৩০-১৭০৫ মিটার উঁচুতে দেখা মেলে এই প্রজাতির ব্যাঙের।
গত বছর হিমালয়ে এক নতুন প্রজাতির সাপের সন্ধান পান জার্মানি, ব্রিটিশ ও ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। সেই সরীসৃপের নাম রাখা হয় বিশিষ্ট হলিউড অভিনেতা লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিওর নামে। সাপের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাঙ্গুইকিউলাস ডিক্যাপ্রিওই (Anguiculus Dicaprioi)। গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় নেচার জার্নালে।
বিজ্ঞানীরা জানান, শান্ত প্রকৃতির সাপের মাথা ছোট্ট। আকারে ছোট্ট সাপের দেখা মেলে হিমাচল প্রদেশের মাটির রাস্তায়। ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও নেপালের চিতওয়ানের জঙ্গলে এই বিশেষ রকমের সাপ পাওয়া যায়। ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই সাপের আরেক নাম ডি’ক্যাপ্রিও হিমালয়ান স্নেক। এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে এই সাপ। খুব বেশি নড়াচড়া পছন্দ করে না।
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় হিমাচলে নিজের বাড়ির পেছনে এই সাপ দেখেন বিজ্ঞানী বীরেন্দ্র ভরদ্বাজ। তিন বছর ধরে শৌনক পাল, জিশান এ মির্জা, গেরনট ভোগেল, প্যাট্রিক ডি ক্যাম্বেল ও হরশিল পাটিল নামে আরও পাঁচ বিজ্ঞানীর সঙ্গে মিলে গবেষণা চালান বীরেন্দ্র ভরদ্বাজ। লাতিন ভাষায় Anguiculus মানে ছোট্ট সাপ।
হলিউডের প্রথম সারির অভিনেতা লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিও অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি একজন পরিবেশরক্ষকও। লিওনার্দো সময় পেলেই জঙ্গলে বেড়াতে চলে যান। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি রিল ভিডিও শেয়ার করে লিওনার্দো গোটা বিশ্বের সঙ্গে ২১টি প্রজাতির প্রাণীর পরিচয় করিয়েছেন যারা হারিয়েই গিয়েছিল।
লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিও ১৯৯৮ সালে পরিবেশ রক্ষার তাগিদে নিজের সংস্থা ‘লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিও ফাউন্ডেশন’ স্থাপন করেন। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, সমুদ্র দূষণ রোধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও উদ্ধার ও ত্রাণকাজের কাজকর্ম করে থাকে লিওনার্দোর সংস্থা। নিজের সংস্থার মাধ্যমে হলিউডি অভিনেতা ‘ওয়াটার প্ল্যানেট’, ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ নামে পরিবেশের ওপর দুটি ছোট ওয়েব ফিল্মও প্রযোজনা করেছেন। দীর্ঘ চার বছরের নিরন্তর গবেষণার পর ২০০৭ সালে তিনি ‘The 11th Hour’ নামের ফিচার ফিল্ম ডক্যুমেন্টারি রিলিজ করেন। এই তথ্যচিত্রেও পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন লিওনার্দো। এখানে প্রযোজনার পাশাপাশি ভাষ্যপাঠও তাঁর ছিল।
২০১৪ সালে রাষ্টপুঞ্জের ‘মেসেঞ্জার অফ পিস ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ’ সম্মান পান লিওনার্দো। ২০১৬ সালে ‘The Revenant’ সিনেমার জন্য অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান লিওনার্দো। অক্সারের মঞ্চেও তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশরক্ষার কথা বলেন।