Home পরিবেশ কালনাগিনীর জল কুচকুচে কালো, দুর্গন্ধে নাকাল কাকদ্বীপবাসী, ভয়াবহ ‘পরিবেশ সঙ্কটের’ ইঙ্গিত

কালনাগিনীর জল কুচকুচে কালো, দুর্গন্ধে নাকাল কাকদ্বীপবাসী, ভয়াবহ ‘পরিবেশ সঙ্কটের’ ইঙ্গিত

একসময় টলটলে ছিল, এখন কুচকুচে কালো। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে কাকদ্বীপের বুকে বয়ে চলা কালনাগিনী নদী। নদীর জল থেকে উঠছে তীব্র দুর্গন্ধ। মাছ নেই, নদীর বুক ফাঁকা। কাকদ্বীপের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদী এতদিন ছিল এলাকার প্রাণভোমরা। এখন তা রীতিমতো মৃত্যুকূপে রূপান্তরিত হচ্ছে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

দূষণের প্রভাব পড়ছে জীবিকা ও পরিবেশে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ বাজারের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া কালনাগিনী শুধু নদী নয়, এ এক জীবনরেখা। বহু মৎস্যজীবীর জীবিকা জড়িয়ে এই নদীর সঙ্গে। মাছ ধরার বড় ট্রলারগুলিও এই নদীতেই নোঙর ফেলে। পাশাপাশি, এটি এলাকার অন্যতম নিকাশি মাধ্যমও। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে নদীর রং ও গন্ধ ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেয়। ভাটার সময়ে নদীর জল কুচকুচে কালো হয়ে যায়, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ। বছরে বাকি সময় জল খানিকটা স্বাভাবিক থাকলেও এই দুই মাস নদীর পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ফলে পার্শে, ট্যাংড়া, চিংড়ি, চুনো মাছ এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না নদীতে।

পরিবেশবিদদের সতর্কবার্তা

নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তুহিন ভদ্র বলেন, “এই পরিস্থিতি স্পষ্টত মারাত্মক দূষণের লক্ষণ। শহরাঞ্চলের নোংরা জল যদি পরিশোধন না করে নদীতে ফেলা হয়, তাহলে এমনটাই হয়। এখন আবার মরা কোটাল চলছে, বৃষ্টিও নেই—ফলে জল সরানো সম্ভব হচ্ছে না, দূষণ জমাট বেঁধে রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “কোথা থেকে এই নোংরা জল নদীতে পড়ছে, তা দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। না হলে এই নদীতে বেঁচে থাকা বাকি জলজ প্রাণীও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”

ফিশারম্যান সংগঠনের উদ্বেগ

কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতির মতে, “জোয়ারের সময়ও এখন নদীর জল বিশেষ বাড়ছে না। এমন ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। দ্রুত পদক্ষেপ না করলে বড় বিপদ তৈরি হবে।”

এই মুহূর্তে নদী যেমন পরিবেশগত সঙ্কটে, তেমনই বিপদে পড়ে গিয়েছেন অসংখ্য মৎস্যজীবী পরিবার। কালনাগিনীর রূপ বদলের ছায়া পড়ছে মুড়িগঙ্গা নদীতেও।

প্রশাসন এবং পরিবেশবিদদের মতে, কালনাগিনীর বর্তমান অবস্থা অবহেলার ফল। নদীর প্রতি যত্ন না নিলে, আগামী দিনে দক্ষিণবঙ্গের এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ এবং তার সঙ্গে জড়িত জীবিকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version