Home শরীরস্বাস্থ্য বাড়তি মেদ ঝরানোর নয়া ট্রেন্ড ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ (Water Fasting), জেনে নিন এর...

বাড়তি মেদ ঝরানোর নয়া ট্রেন্ড ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ (Water Fasting), জেনে নিন এর ভালো-মন্দ

0

মৌ বসু

গোটা বিশ্বে এখন ডায়েট কন্ট্রোলের সর্বাধুনিক ট্রেন্ড হল ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ (Water Fasting)। কী এই ‘ওয়াটার ফাস্টিং’? এটি হল শুধুমাত্র জল খেয়ে উপোস করার পদ্ধতি। সাধারণত উপোসের সময় ভাত, রুটি বা ভারী খাবার না খেলেও জল, শরবতের মতো তরল পানীয়র পাশাপাশি ফলমূল, মিষ্টি, সাবু, ডালিয়া, ওটস খাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে জল ছাড়া আর কোনোরকম তরল বা শক্ত খাবার বা পানীয় খাওয়া যাবে না।

সম্প্রতি অ্যাডিস মিলার নামে লাতিন আমেরিকার কোস্তা রিকার এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি ‘ওয়াটার ফাস্টিং’-এর মাধ্যমে শুধু জল খেয়ে ২১ দিনে ১৩ কেজি ওজন ঝরিয়েছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ওই ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করার পরই তা ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে।

কী এই ‘ওয়াটার ফাস্টিং’

এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জল ছাড়া কিছুই খাওয়া যাবে না। কোনো খাবার না খেয়ে শুধু জল খেয়ে উপোস করলে আমাদের শরীরে কিটোসিস প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে শরীরে মেদ হিসাবে জমা হওয়া ফ্যাট বা চর্বি গলতে শুরু করে। তখন আমাদের শরীর খাবার থেকে আসা গ্লুকোজ এনার্জির ওপর আর নির্ভর করে না। গলতে থাকা ফ্যাট থেকে এনার্জি বা শক্তি সংগ্রহ করে। এতে বাড়তি মেদ ঝরে। শরীর ফুলিয়ে দেয় এমন পদার্থের মাত্রা কমে যায় বলে শরীর ছিপছিপে লাগে।

‘ওয়াটার ফাস্টিং’ করলে কী হয়

‘ওয়াটার ফাস্টিং’-এর মাধ্যমে সাময়িক ভাবে তাড়াতাড়ি বাড়তি মেদ ঝরে। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের হয়ে যায়। ইনসুলিন নিঃসরণ ভালো থাকে। উপোসের মাধ্যমে অটোফ্যাগি (autophagy) নামক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ নষ্ট হয়ে গিয়ে তার জায়গায় নতুন কোষের জন্ম হয়।

‘ওয়াটার ফাস্টিং’ নিয়ে কী সতর্ক করছেন ডাক্তাররা

তবে সব কিছুরই যেমন ভালো-মন্দ আছে, ‘ওয়াটার ফাস্টিং’-এর ক্ষেত্রেও তা-ই। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ করলে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ইলেকট্রোলাইট বা রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ভারসাম্যের ঘাটতি দেখা যায়। চর্বির পাশাপাশি মাসল বা পেশির টিস্যু ভাঙতে শুরু করে। ক্লান্তি, চোখে ঝাপসা দেখা, দুর্বলতার সমস্যা দেখা যায়। ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখে ভুগলে এ রকম ভাবে উপোস করলে জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কিছু উপকার হলেও ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ওয়াটার ফাস্টিংয়ের মাধ্যমে ওজন হয়তো কমছে কিন্তু স্বাস্থ্যের দিক থেকে এর উপকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। শিকাগোর ইলিনোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টা ভারাডি জানান, “আমি জানি বেশ কয়েক বছর ধরে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পদ্ধতি হিসাবে ট্রেন্ডে রয়েছে ওয়াটার ফাস্টিং তবে এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা দ্রুত কমে যায়।” ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ২০ দিন শুধু জল খেয়ে থাকতে হয়। অধ্যাপক ভারাডি ও তাঁর সহকর্মীরা ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ওপর ৮ রকম গবেষণা চালান। গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ দিন ধরে একটানা ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কারওর ৪% থেকে ৬% ওজন ঝরেছে। ৭-১০ দিন ধরে একটানা ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে ২% থেকে ১০% ওজন ঝরেছে আর ১৫-২০ দিন ধরে একটানা ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কারওর ৭% থেকে ১০% ওজন ঝরেছে।

তবে শুধু বাড়তি মেদই নয় ওয়াটার ফাস্টিংয়ের সময় মানুষ চর্বির বদলে বেশি পরিমাণে ‘লিন মাসল্‌ মাস’ (lean muscle mass) ঝরিয়ে ফেলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেহের ওজনের ২/৩ অংশই এই ‘লিন মাসল্‌ মাস’। এটি কমে গেলে রেস্টিং মেটাবলিক রেট বা বিপাকক্রিয়ার হার কমে যায়। ফলে ওজন প্রচণ্ড কমে গেলে ভবিষ্যতে ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে রক্তচাপ, রক্তের শর্করা ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ফের স্বাভাবিক ভাবে খাওয়াদাওয়া শুরু করলে আবার পুরোনো অবস্থায় ফিরে যায় রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তের শর্করার মাত্রা। টাইপ টু বা ওয়ান ডায়াবেটিস রোগীর শরীরেও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

এ ছাড়াও ওয়াটার ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে খাইখাই ভাব, মাথার যন্ত্রণা, বমিবমি ভাব, ঘুমের সমস্যার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা ওয়াটার ফাস্টিং করলে শরীরে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি হয় বলে সতর্ক করেছেন বস্টন মেডিক্যাল সেন্টারের ওবিসিটি মেডিসিনের অধিকর্তা ইভানিয়া রিজো। তাই ওজন কমাতে সাময়িক উপোস করার পরামর্শ দিলেও বিশেষজ্ঞরা ওয়াটার ফাস্টিং পদ্ধতিকে সুবিধাজনক অবস্থা বলে মানছেন না।

আরও পড়ুন

ফিটনেসের নতুন ট্রেন্ড ‘রেট্রো ওয়াকিং’, পেছন দিকে হাঁটলে কী হয় জানেন

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version