আবদুল গাফফার চৌধুরী। তাঁর পরিচিতি শুধু মাত্র সাংবাদিক জগতেই নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও অবদান রয়েছে তাঁর। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি, ভাষা আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি লিখেছিলেন তিনি। বাঙালির কাছে একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রভাতফেরির ‘সিগনেচার টিউন’ হয়ে রয়েছে ওই গানটি।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন গাফফার। তাঁর বাবা ছিলেন হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। পাঁচ বোন হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।
ছাত্র জীবনেই তার সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। বরিশালের সন্তান শামসুদ্দীন আবুল কালামের লেখা তখন কলকাতার প্রধান পত্রিকাগুলোতে ছাপা হতো। ১৯৫০ সালে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তখন বেতন পেতেন ৭০ টাকা।
১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স পাশ করেন। এর পর কর্মজীবনে একের পর এক মাইলস্টোন ছুঁয়েছেন গাফফার। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন একের পর এক পত্রিকায়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকাশ করেন ‘দৈনিক জনপদ’ নামে পত্রিকা। তবে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে তিনি পাড়ি দেন ব্রিটেনে। তবে প্রবাসে বসেও তিনি বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোতে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিয়মিত লিখে গিয়েছেন। বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে লেখা তাঁর কলাম ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়।
২০২২ সালের ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ‘একুশে’র গানের রচয়িতা, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন ৮৭ বছরের গাফফার।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একটি শোকবার্তায় জানিয়েছিলেন, গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর মেধা-কর্ম ও লেখনিতে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মানিত রেখেছেন।”