খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কবি জীবনানন্দ দাশ এবং জগদীশচন্দ্র বসুর মতো প্রখ্যাত মনীষীদের নাম সরিয়ে সাধারণ নামকরণ করা হয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনা তীব্র হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘হল ও বিভিন্ন ভবনের নতুন নামকরণ প্রস্তাবনা কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’ নাম পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব আহ্বান করেছিল। তবে সিন্ডিকেট সভায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক নাম নয়, বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের নামও পরিবর্তন করা হয়, যা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “জগদীশচন্দ্র বসুর নামে করা ভবনের নাম পাল্টানো হবে, এটা কল্পনার বাইরে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।
বিএনপি নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ডু খুলনা নগর বিএনপির সম্মেলনে বলেন, “ফ্যাসিবাদীদের ছবি নামানো হবে, কিন্তু মনীষীদের নাম পরিবর্তনের অধিকার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফে উপাচার্য মো. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা আমাদের মতো করে কিছু করিনি। শিক্ষার্থীদের লিখিত দাবির ভিত্তিতেই এই পরিবর্তন হয়েছে। এটি একক সিদ্ধান্ত নয়, সিন্ডিকেটের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।” তবে তিনি আলোচনার জন্য প্রশাসনের দরজা খোলা আছে বলেও জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, “বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নাম পরিবর্তন করা উচিত হয়নি। এটি মনীষীদের অসম্মান করার শামিল।”
শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম পরিবর্তনের, কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে বিজ্ঞানী, কবি ও গবেষকদের নামও। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থী আয়মান আহাদ বলেন, “আমরা রাজনৈতিক নাম পরিবর্তনের দাবি করেছিলাম, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করেছে।”
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের নতুন নামকরণ করা হয়েছে—
- সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন → একাডেমিক ভবন ১
- জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন → একাডেমিক ভবন ২
- কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন → একাডেমিক ভবন ৩
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল → বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন হল
- বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল → বিজয় ২৪ হল
- শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবন → প্রশাসনিক ভবন
- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার → খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনোয়ারুল কাদির বলেন, “এটি নিম্ন রুচির পরিচয়। শিক্ষকদের এমন মানসিকতা অপ্রত্যাশিত।”
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের অবস্থান বদলানোর কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।