ভারত-চিন সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনে চার বছর পর আবারও বৈঠকে বসলেন দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার বেজিংয়ে পৌঁছান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল। বুধবার তিনি চিনের বিদেশমন্ত্রী ও বিশেষ প্রতিনিধি ওয়াং ই-এর সঙ্গে ২৩তম বিশেষ প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেবেন।
২০২০ সালের মে মাসে পূর্ব লাদাখে শুরু হওয়া সীমান্ত সংঘাত এবং গালওয়ান উপত্যকার বহু আলোচিত সংঘর্ষের ফলে চার বছরের জন্য ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কার্যত স্থগিত ছিল। ২১ অক্টোবর উভয় দেশের মধ্যে ডেমচক এবং দেপসাং অঞ্চলে সেনা পিছিয়ে নেওয়ার চুক্তি বাস্তবায়নের পর এই বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৈঠকের আগে চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান জানিয়েছেন, সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে অঙ্গীকার রক্ষা করতে প্রস্তুত চিন। তিনি বলেন, “কাজানে ব্রিকস সম্মেলনের সময় দুই নেতার মধ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে ভারত ও চিন একসঙ্গে কাজ করবে। আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আস্থা বৃদ্ধি করা হবে।”
গত অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ বছর পর প্রথম বারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সীমানা সমস্যার ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজার বিষয়ে সম্মত হন দুই নেতা। ওই বৈঠকের পর বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী জিউই মাউর মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পূর্ব লাদাখে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর সংঘাত কার্যত বন্ধ হওয়ার পর এটি উভয় দেশের মধ্যে প্রথম প্রকাশ্য সরকারি আলোচনা। ২০১৯ সালে দিল্লিতে শেষ বৈঠকের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর এই বিশেষ প্রতিনিধি প্রক্রিয়া স্থগিত ছিল।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়ার অধীনে ভারত-চিন সীমান্তের ৩,৪৮৮ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে আলোচনা করা হয়। যদিও এই প্রক্রিয়ায় সীমানা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসেনি, তবে উভয় পক্ষই এটি সীমান্ত উত্তেজনা মোকাবিলার জন্য কার্যকর একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বুধবারের বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন পথ খুলতে পারে। তবে উত্তেজনা প্রশমনে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়াই হবে দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তি।


