ইজরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘ডেজ অফ রেপেন্ট্যান্স’ ইরানের সমস্ত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে অকার্যকর করে দিয়েছে বলে একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইজরায়েলি হামলার পর ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
অপারেশনটির আওতায় গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) কাকভোরে ইজরায়েলি বাহিনী ইরানের সামরিক কেন্দ্রগুলিতে আক্রমণ চালায়। এই হামলায় তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি গোপন সামরিক ঘাঁটিসহ বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। এই ঘাঁটিটি আগে ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির অঙ্গ ছিল বলে জানা যায়। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি ঘাঁটিতেও আঘাত হানা হয়।
এই হামলা ইরানের সাম্প্রতিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়, যা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের প্রথম খোলাখুলি সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হামলায় ইরানের উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভবিষ্যতে আরও আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন। ইজরায়েলি হামলায় ইরানের সামরিক ঘাঁটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, দাবি স্যাটেলাইট ছবিতে
ইজরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি প্রদেশে একটানা তিন দফায় আক্রমণ চালায়। মার্কিন ও ইজরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া সরবরাহকৃত তিনটি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমসহ আরও একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে টার্গেট করা হয়, এবং এতে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে।
এই আক্রমণের পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খোমেইনি ইজরায়েলের প্রতি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য ইরানি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন। খোমেইনি বলেন, ইজরায়েলের “অসৎ কর্মকাণ্ড” বড় করে না দেখালেও, এর উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও তেহরান ও পশ্চিম ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলির ক্ষতি সীমিত হলেও, ইরানের শক্তি প্রদর্শনের জন্য আরও উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন খামেনি। তাঁর কথায়, ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন’, ইজরায়েলকে কঠিন জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রবিবার এক বিবৃতিতে বলেন যে, ইজরায়েলের হামলায় ইরানের “গুরুতর ক্ষতি” করা হয়েছে এবং এই আক্রমণ “সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে।”
আরও পড়ুন। ইজরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি, ইরানকে আমেরিকার হুঁশিয়ারি, কী বলছে রাশিয়া?
অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই পরিস্থিতিতে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও সংঘাত এড়ানো যায়।
ইজরায়েলের এই নির্ভুল আক্রমণে ইরানের বিভিন্ন স্থাপনা, বিশেষ করে তেহরান ও পারচিন এলাকার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়। পারচিন অঞ্চলে স্যাটেলাইট ইমেজে একটি কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। তেহরানের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খোজির এলাকাতেও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ যায়।
পারচিন ও খোজির এলাকায় বিস্ফোরণগুলো সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্থাপনাগুলিতে ইরান তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য কঠিন জ্বালানি তৈরি করত। ইজরায়েলি বাহিনীর একটি বিবৃতিতে বলা হয় যে, এই কারখানাগুলিতে এমন মিসাইল তৈরি হত যা গত বছর ইজরায়েলে আঘাত হেনেছিল।
এরপরেও, ইরানের সামরিক বাহিনী বা রেভেলিউশনারি গার্ড এই হামলার বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারে বর্তমানে তিন হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল, যার মধ্যে অধিকাংশ ইজরায়েল পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম নয়।
সাম্প্রতিক হামলায় শামসাবাদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটিতে তেহরানের কাছে একটি কারখানা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। ইরানের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমাম খোমেইনির কাছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রভাব ফেলে এই হামলা।
