অবশেষে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করলেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা হয়। গত ৪৮ ঘণ্টার সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ২৫ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রথমে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইউটিউব নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদেই রাস্তায় নামে নেপালের তরুণ প্রজন্ম। তবে দ্রুতই সেই আন্দোলন রূপ নেয় দুর্নীতিবিরোধী ‘Gen Z Protest’-এ। প্রশাসনে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও ক্ষমতাশালীদের সন্তানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সরব হন বিক্ষোভকারীরা।
সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সোমবার রাতে বিক্ষোভকারীরা নেপালের পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। কাঠমান্ডুর রাস্তায় দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় যুবকেরা। শহরজুড়ে কালো ধোঁয়া, পুড়ে যাওয়া গাড়ি, ভাঙচুর হওয়া বাড়িঘরের ছবি যুদ্ধক্ষেত্রের আবহ তৈরি করেছে।
বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবনে হামলা চালান। বেশ কয়েকটি ঘরে আগুন লাগানো হয়, ভাঙচুর করা হয় আসবাবপত্র ও ছবিও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে সরকার সেনা নামাতে বাধ্য হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মন্ত্রীদের সরিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পদত্যাগ সত্ত্বেও সরকার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েনি। নেপালে প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান হলেও রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পাওডেল হলেন সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রধান। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগও সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সামাজিক মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে—#NepoKid, #NepoBabies, #PoliticiansNepoBabyNepal। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁদের স্লোগান—“Stop corruption, not social media”।
এক দিনের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন নেপালের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।