অবশেষে পিছু হটল নেপাল সরকার। রক্তক্ষয়ী ছাত্র-যুব আন্দোলনের পর সোমবার গভীর রাতে তুলে নেওয়া হল সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা। সূত্রের খবর, জরুরি বৈঠকে নেপালের গৃহমন্ত্রী রমেশ লেখক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
কাঠমান্ডুর রাজপথে গত কয়েক দিনে নজিরবিহীন সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন, তাঁদের মধ্যে এক জন ১২ বছরের শিশু। আহত হয়েছেন ৩০০-রও বেশি মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা নামানো হয় রাজধানীতে। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে কারফিউ ভাঙার পর উত্তেজনা আরও বাড়ে।
প্রতিবাদকারীরা অভিযোগ করেন, সরকারের দুর্নীতি এবং কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধেই তাঁদের আন্দোলন। ২৪ বছরের ছাত্র ইউজন রাজভাণ্ডারি বলেন, “আমরা শুধু সমাজমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞার জন্য নই, বরং নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধেই রাস্তায় নেমেছি।” অন্যদিকে ২০ বছরের ছাত্রী ইক্ষামা তুমরোক বলেন, “আমরা পরিবর্তন চাই। আগের প্রজন্ম সহ্য করেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মে এই অন্যায় শেষ হওয়া উচিত।”
বিক্ষোভ দমনে পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস, রবার বুলেট ব্যবহার করে। তাতেও থামেনি ভিড়। বহু আন্দোলনকারী সংসদ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। একাংশের হাতে ছিল গাছের ডাল, বোতল, আর শ্লোগানে মুখর ছিল রাজপথ।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকে নেপালে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ছিল। সরকারের দাবি ছিল, এই সংস্থাগুলিকে দেশে নথিভুক্ত করা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য অফিসার নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সাত দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও অধিকাংশ সংস্থা নির্দেশ মানেনি। ফলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
যদিও এর জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যুবসমাজ। অভিযোগ ওঠে, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। টিকটকে ভাইরাল হয় সাধারণ নেপালিদের দুর্দশা বনাম রাজনীতিকদের সন্তানের বিলাসবহুল জীবনের তুলনা। পরিস্থিতি দ্রুত বিস্ফোরক হয়ে ওঠে।
অবশেষে চাপের মুখে সরে এল সরকার। রবিবার জারি এক বিবৃতিতে নেপাল সরকার দাবি করে, তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং সমাজমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।