স্কুলছাত্রীকে মন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কা, ‘সাধারণ দুর্ঘটনা’ মন্তব্যে আগুনে ঘি— স্বজনপোষণ, দুর্নীতি আর বেকারত্বে ক্ষোভে ফেটে পড়ল নেপালের জেন জেড
নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার আগুন ছড়িয়ে পড়ল এক ছোট্ট ঘটনাকে ঘিরে। ললিতপুরের হরিসিদ্ধি সেকেন্ডারি স্কুলের বাইরে ৬ সেপ্টেম্বর সকালে কোশি প্রদেশের মন্ত্রী রাম বাহাদুর মাগারের সরকারি গাড়ি ধাক্কা দেয় ১১ বছরের উষা মাগার সুনওয়ারকে। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে, শিশুটি রাস্তার ধারে ছিটকে পড়লেও মন্ত্রীর গাড়ি সোজা চলে যায়। উষা প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘটনাটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়, আর ক্ষোভে ফেটে পড়ে নেপালবাসী।
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ঘটনাটিকে ‘সাধারণ দুর্ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন এবং শুধু শিশুটির চিকিৎসার খরচ বহনের আশ্বাস দেন। কিন্তু তাঁর সেই মন্তব্যকেই অনেকে “অমানবিক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ” বলে সমালোচনা করেন। পোখরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যোগ রাজ লামিছানে বলেন, “যদি এক মন্ত্রীর গাড়ি স্কুলছাত্রীকে ধাক্কা দেয় আর প্রধানমন্ত্রী বলেন এটা সাধারণ ঘটনা, তাহলে আমরা কী আশা করব?”
কলেজ চত্বর, চায়ের দোকান, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ ওঠে। ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী মীরা থাপা জানান, “শিশুটিকে ফেলে রেখে যাওয়ার ভিডিও আমাদের দেখিয়ে দিল, আমরাই এখানে মূল্যহীন। দুর্নীতি, বেকারত্ব, স্বজনপোষণের ক্ষোভ ছিলই—এটাই স্ফুলিঙ্গ।”

বেকারত্ব, থমকে যাওয়া অর্থনীতি
২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের ১৫–২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০.৮%। প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ গালফ দেশ ও মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন। দেশের জিডিপির ৩৩% এর বেশি আসে রেমিট্যান্স থেকে। দেশে থেকে যাওয়া যুবকদের জীবন আরও কঠিন—বেকারত্ব, দুর্নীতি, থমকে যাওয়া উন্নয়ন প্রকল্প আর বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতি।
In Nepal, citizens capture communist politicians and throw them into the river. pic.twitter.com/3eKGOh1j7h
— RadioGenoa (@RadioGenoa) September 9, 2025
নজরে ‘নেপো কিড’
এই ক্ষোভের মাঝে উঠে এসেছে “নেপো কিড” প্রসঙ্গও—রাজনীতিবিদদের সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপনের ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শন করছেন। এক বিক্ষোভকারী বলেন, “নেপো কিডরা ইনস্টাগ্রামে দামি গাড়ি-জুতো দেখায়, কিন্তু সেই টাকা কোথা থেকে আসে কেউ বলে না।”
রাজধানী কাঠমান্ডুতে তরুণদের স্লোগান ছড়িয়ে পড়ে—“ওলি চোর, দেশ ছাড়”। প্রতিবাদকারীদের মতে, নেপাল গণতন্ত্রে বসবাস করলেও বাস্তবে চলছে মন্ত্রীদের একচ্ছত্র রাজত্ব।
মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন কমিশনার সুশীল পায়াকুরেল বলেন, “যেদিকেই তাকান, শুধু রাজনীতিবিদদের আত্মীয়-স্বজন পদে বসানো। সাধারণ মানুষ সুযোগ থেকে বঞ্চিত।”প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এনপি সৌদ দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ স্বীকার করলেও সংবিধান ও আইন মেনে সমাধানের আহ্বান জানান। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, বৈধতার বাইরেও মানবিকতার প্রশ্ন রয়েছে। বিক্ষোভকারী রচনা সাপকোটা বলেন, “আমার মানবিকতা আমাকে ঘরে বসে থাকতে দেয়নি। আমরা ন্যায় চাই, মর্যাদা চাই।”