দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ ও বাশার আল-আসাদের পতনের ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগোচ্ছে সিরিয়া। পশ্চিম এশিয়ার এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির স্কুলগুলোতে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। রবিবার দামাস্কাসের গির্জাগুলোতে প্রার্থনায় অংশ নিতে দেখা গেছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের।
গৃহযুদ্ধের ছাপ মুছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা
বাশার পতনের পর বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য এখন সিরিয়ার পুনর্গঠন। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইরত বাশারের প্রাক্তন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এখন সংঘাত এড়াতে আগ্রহী।
অন্যদিকে, ইজরায়েলের ধারাবাহিক হামলার মুখে সামরিক প্রতিক্রিয়ার বদলে কূটনৈতিক সমাধানের উপর জোর দিচ্ছেন জোলানি। তার মতে, প্রতিশোধমূলক মনোভাব নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে সিরিয়ার পুনর্গঠনের আহ্বান
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে সিরিয়ার জন্য এক “ঐতিহাসিক সুযোগ” বলে অভিহিত করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও জানিয়েছে, মানবাধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
চিন, ইরান, এবং যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিদ্রোহী সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাদা অবস্থান নিয়েছে। চিন ও ইরান আশা করছে, সিরিয়া দ্রুত স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে সমাধানের পথ খুঁজছে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বস্তি
বাশারের ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ছিল সিরিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়। তবে রবিবার দামাস্কাসের বাব তৌমা গির্জায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সমবেত প্রার্থনায় যোগদান তাদের স্বস্তির বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব
নতুন নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠী সরাসরি ক্ষমতায় না আসলেও, ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে মহম্মদ আল-বাশিরকে। পুনর্গঠন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন তাদের মূল চ্যালেঞ্জ।
দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের ক্ষত কাটিয়ে সিরিয়ার এই নতুন অধ্যায় আন্তর্জাতিক মহলে আশার আলো দেখাচ্ছে। এখন দেখার, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও অভ্যন্তরীণ সংহতি কত দ্রুত দেশটিকে পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

