Home অনুষ্ঠান ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবের ৪৭তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান, পাশে থাকার বার্তা দিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত...

ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবের ৪৭তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান, পাশে থাকার বার্তা দিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু

জীবনের কান্ডারি হলেন বাবা-মা। ছাত্রছাত্রীরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই বাবা-মাকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে না দেন, সে-ই আবেদন জানালেন সাধারণ সম্পাদক।

আলোক প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা।

নিজস্ব প্রতিনিধি: মহানগরীর অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাগৃহ রবীন্দ্র সদনে কলকাতার সাংবাদিকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবের ৪৭তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হয়ে গেল গত শনিবার। এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু।

প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এর পর অতিথিবরণের পালা। এ দিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে বরণ করে নেন ক্লাব সভাপতি প্রান্তিক সেন, সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন ও কোষাধ্যক্ষ সাধনা দাস বসু।

প্রধান অতিথি রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুকে বরণ করছেন সভাপতি প্রান্তিক সেন (ডান দিকে), সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন (বাঁ দিকে) এবং কোষাধ্যক্ষ সাধনা দাস বসু। রয়েছেন ক্লাবের অন্যতম মেন্টর রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।

সভাপতির স্বাগত ভাষণ

স্বাগত ভাষণে ক্লাবের সভাপতি প্রান্তিক সেন ক্লাব গোড়াপত্তনের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করে সংগঠনের বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মের কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ক্লাব আয়োজিত বিভিন্ন বাৎসরিক অনুষ্ঠানের কথা। এর মধ্যে রয়েছে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি। ক্লাব আয়োজিত বাৎসরিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী যে এই মহানগরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট সে কথা বুঝিয়ে বলেন প্রান্তিকবাবু।

ক্লাবের নতুন অফিসঘর পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রান্তিকবাবু। তিনি জানান, একই ভবনের ষষ্ঠ তল থেকে দ্বিতীয় তলে চলে এসেছে ক্লাবের কার্যালয়। নতুন কার্যালয়টি পুরোনোর চেয়ে আকারে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম চালাতে আরও বেশি সুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্লাবের যে গ্রন্থাগার রয়েছে, তা আবার সক্রিয় করে তোলা হচ্ছে, যাতে সাংবাদিকতা ও জনসংযোগের ছাত্রছাত্রীরা ওই গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে পারেন।   

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু তাঁর ভাষণে প্রথমেই ক্লাবের কর্মকর্তা-সহ সকল সদস্য এবং উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি ক্লাবের নানা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং ক্লাবের সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ডে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে ক্লাবের সর্বাঙ্গীণ কুশল কামনা করেন রাজ্যের মন্ত্রী।

ভাষণ দিচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু।

ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আবেদন সাধারণ সম্পাদকের

ক্লাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ক্লাবের যে সব সদস্য সক্রিয় থাকেন তাঁদের নামোল্লেখ করে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন। ক্লাবের বিভিন্ন উদ্যোগে যে সব সংস্থা এবং ব্যক্তিবিশেষ নানা ভাবে পাশে থাকেন তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান ইমনবাবু।

এ বারের বার্ষিক অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপকদের শুভেচ্ছা জানান ইমনবাবু। ক্লাবের প্রথম কোষাধ্যক্ষ বর্ষীয়ান সদস্য ত্রিদিবরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড় সিন্ড্রেলা দাস ছাড়া পুরস্কারপ্রাপকদের বাকি সবাই ছাত্রছাত্রী। এঁদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন একটা কথা স্মরণ করিয়ে দেন। জীবনে চলার পথে তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার কান্ডারি হলেন তাঁদের বাবা-মা। এখনকার ছাত্রছাত্রীরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই বাবা-মাকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে না দেন, সে-ই আবেদন জানালেন ইমনবাবু।        

বিশিষ্ট অতিথি, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও এ দিন অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সাধনা দাস বসু, চার মেন্টর রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ মতিলাল, সমীর গোস্বামী ও শম্ভু সেন, সহ-সভাপতি পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী ও নরেশ মণ্ডল, দুই সহকারী সম্পাদক সঞ্জয় হাজরা ও অভিজিৎ ভট্টাচার্য। এ দিন ক্লাবের মুখপত্র ‘সাংবাদিক’-এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করা হয়।

‘সাংবাদিক’-এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ।

পুরস্কার প্রদান

বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী শ্রেষ্ঠা সরকারকে দেওয়া হয় সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার। ড. স্মরজিৎ দত্ত স্মৃতি পুরস্কার পান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী ঋক সরকার। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী অঙ্কিতা রায়কে নিরঞ্জন সেনগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।

পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী পায়েল দাসকে দেওয়া হয় বরুণ সেনগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী সৌম্যদীপ মিত্র পেলেন রাহুল গোস্বামী স্মৃতি পুরস্কার।

ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য এবং প্রথম কোষাধ্যক্ষ ত্রিদিবরঞ্জন ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেওয়া হয় দক্ষিণারঞ্জন বসু স্মৃতি পুরস্কার। অমিত চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হল উদীয়মান টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সিন্ড্রেলা দাসকে।

ক্লাবের প্রথম কোষাধ্যক্ষ ত্রিদিবরঞ্জন ভট্টাচার্যকে সম্মাননা জ্ঞাপন।

এ ছাড়াও যে সব ক্লাব সদস্যের ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনি মাধ্যমিক বা সমতুল এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে তাদেরও হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পুরস্কৃত করা হল সৃজনী ভট্টাচার্য, উমর জনেইদ, শুভদীপ পণ্ডিত এবং অন্বেষা চক্রবর্তীকে। এদের মধ্যে সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার জন্য অভীক বসু স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হল সৃজনী ভট্টাচার্যকে।

দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পুরস্কৃত করা হল শ্রীজাতা ব্যানার্জি, সৃজনী কর্মকার, আরিয়ান মিশ্র, প্রন্নেষা চৌধুরী, অনুভব দে, অন্বেষা সাঁতরা, তন্নিষ্ঠা দত্ত, মণিদীপা পাইন, সম্পূর্ণা দে এবং সুতনু জানাকে। এদের মধ্যে সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার জন্য শ্রীজাতা ব্যানার্জির হাতে তুলে দেওয়া হল হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার।

সংগীত পরিবেশন করছেন কল্যাণ সেন বরাট।

দ্বিতীয় পর্বে ক্যালকাটা কয়্যার

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল কল্যাণ সেন বরাটের নেতৃত্বে ক্যালকাটা কয়্যারের সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন। এই ২০২৫-এ পালিত হচ্ছে বাংলা তথা ভারতের অবিস্মরণীয় গীতিকার-সুরকার-কথাকার সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ। ক্যালকাটা কয়্যারের এ দিনের পরিবেশনা ছিল তাঁকেই উৎসর্গ করে। সম্মেলক সংগীত ও নৃত্য সহযোগে ‘গঙ্গা গঙ্গার তরঙ্গে প্রাণ-পদ্ম ভাসাইলাম রে’ পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। তার পর পরিবেশিত হল সলিল চৌধুরী রচিত জনপ্রিয় গণসংগীত, আধুনিক বাংলা গান, বক্স অফিস হিট করা বলিউডি গান, ব্যঙ্গাত্মক গান এবং সবেশেষে ‘রানার’।

একক নৃত্যে কবীর সেন বরাট।

‘রানার’ পরিবেশনার মাধ্যমে স্মরণ করা হল অকালপ্রয়াত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে। উল্লেখ্য, সলিলের চেয়ে বয়সে এক বছরের ছোটো সুকান্তের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে ২০২৬-এ। ‘রানার’ সংগীত একক ভাবে পরিবেশন করলেন কল্যাণ সেন বরাট এবং একক নৃত্যে ছিলেন কবীর সেন বরাট। এর আগে সলিলের ব্যঙ্গাত্মক গান ‘আরে ভাই রে ভাই, মোর মতো আর দেশপ্রেমিক নাই’-এর সঙ্গে একক নৃত্যে ছিলেন কবীর। দর্শক মুগ্ধ হয়ে চাক্ষুষ করেছেন তাঁর নৃত্য পরিবেশনা। দেড় ঘণ্টায় সলিল চৌধুরীর ১৩টি নানা ধরনের গান পরিবেশন করে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের মজিয়ে রাখল ক্যালকাটা কয়্যার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করেন নন্দিনী লাহা।

ছবি: সঞ্জয় হাজরা ও অভিজিৎ ভট্টাচার্য  

আরও পড়ুন

নব সাজে ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাব, উদ্বোধন করলেন দেবাশিস কুমার

📰 আমাদের পাশে থাকুন

নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

💠 সহায়তা করুন / Support Us

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version