কলকাতার নেতাজিনগরে বেআইনি ভাবে নির্মিত একটি বহুতল আবাসন ভেঙে পড়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, মাসখানেক আগে থেকেই বাড়িতে ফাটল দেখা দেয় এবং দক্ষিণ দিকে হেলে পড়ে। গত ১৭ ডিসেম্বর বাড়ি ‘সোজা করার’ প্রক্রিয়া শুরু হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপর্যয় ঘটে।
মঙ্গলবার রাত থেকে ফ্ল্যাট ভাঙার কাজ শুরু করেন পুরকর্মীর। বুধবারও এই ভাঙার কাজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর ১০-১২ আগে জলাভূমি ভরাট করে নির্মিত হয়েছিল বহুতলটি। অভিযোগ, চারতলা বাড়ি নির্মাণের কোনও অনুমোদন ছিল না। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, হেলে পড়ার বিষয়ে তারা বহু আগেই প্রোমোটার সুভাষ রায়কে জানিয়েছিলেন।
প্রোমোটার আশ্বাস দেন যে, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়িটি লিফটিং করিয়ে সোজা করবেন। এমনকি বাসিন্দাদের অন্যত্র আশ্রয় নিতে বলেন। চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেন, সমস্ত আর্থিক দায়ভার তিনি নিজেই নেবেন। তবে, আবাসনের কোনও ক্ষতি হলে তিনি একা দায়িত্ব নেবেন না।
হরিয়ানার একটি সংস্থার মাধ্যমে লিফটিংয়ের কাজ শুরু হলেও, কলকাতা পৌরসভার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বাসিন্দাদের অজান্তেই কাজ চলতে থাকে বলে অভিযোগ।
বাড়ি ভেঙে পড়ার পর থেকে প্রোমোটার সুভাষ রায় পলাতক। কলকাতা পৌরসভা ইতিমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। উল্টে, বাসিন্দাদের বিরুদ্ধেও নেতাজিনগর থানায় মামলা হয়েছে।
প্রকাশ্যে এসেছে, অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও জল সংযোগ দিয়েছিল কলকাতা পৌরসভা। স্থানীয় পুর প্রতিনিধি ও যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার বলেন, “এই বাড়ির কোনও অনুমোদিত প্ল্যান ছিল বলে আমার সন্দেহ। লিফটিংয়ের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি। পুরসভাকে বিষয়টি জানানো হয়নি।” সিপিএম আমলেই অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় একাধিক বিল্ডিং তৈরি হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অনুমতি না থাকা সত্ত্বে জল সংযোগ এবং অন্য পুর পরিষেবা দেওয়া হল কেন? এ প্রসঙ্গে দেবব্রত মজুমদার সংবাদমাধ্যকে বলেন, “মানবিক কারণে জল ও অন্যান্য পরিষেবা দিতে হয়েছে।” তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। এই ঘটনার পর এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিএম।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লিফটিংয়ের জন্য অনুমতির প্রয়োজন সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা ছিল না। এক আবাসিক শিউলি বক্সী বলেন, “প্রোমোটার সব দায়িত্ব নেবেন বলেছিলেন। এখন আমরা ঘর হারিয়ে নিঃস্ব।”
অন্য এক বাসিন্দা অভিজিৎ বক্সী বলেন, “যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছি, তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে শুনেছি। আমরা আইনজীবীর পরামর্শ নিচ্ছি।”
বাড়ি ভাঙা শুরু হলেও এই ঘটনাকে কেন্দ্রে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।