নিজস্ব প্রতিনিধি: শারদীয়া দুর্গাপূজার রেশ কাটতে না কাটতে চলে এল কালীপুজো। হাওয়ায় হালকা ঠান্ডার অনুভূতি। রবিবার সকাল থেকেই মহানগরী কলকাতার মন্দিরগুলোয় নেমেছে ভক্তের ঢল।
এই শহরের অতীত খুঁড়লে বহু বিখ্যাত কালীর সন্ধান মেলে। বিস্ময় জাগে এক একটি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু বছরের পুরোনো ইতিহাস। কুমারটুলিতে আছেন ‘গিন্নিমা’, দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী। তিনি খুবই জাগ্রত। কালীপুজো উপলক্ষ্যে সারা রাত মন্দির খোলা থাকে। ভক্তেরা বিশ্বাস করে তিনি সবার প্রার্থনা পূরণ করেন।
এই সিদ্ধেশ্বরী কালী যে কত প্রাচীন তার হিসাব নেই। তবে এটুকু নিঃসংশয়ে বলা যায়, কলকাতা তখনও শহর হয়নি। গঙ্গার পাড়ে এই জঙ্গুলে জায়গায় ছিল ডাকাতদের ভয়। কালীবর তপস্বী নামে এক সন্ন্যাসী হোগলাপাতার ছাউনিতে এই কালীর পুজো করতেন।
সিদ্ধেশ্বরী কালীর বর্তমান মন্দিরটি উত্তর কলকাতার মদনমোহনতলা অঞ্চলে চিৎপুর রোডে অবস্থিত। কুমারটুলির গোবিন্দরাম মিত্রের পরিবার এই দালানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শোভাবাজারের নবকৃষ্ণ দেব এই মন্দিরে অন্নভোগের সবজি পাঠাতেন। আজও সেই প্রথা চলে আসছে।
কিংবদন্তি নট ও নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ অসুস্থ হলে এই মন্দিরে এসে শ্রীরামকৃষ্ণ ডাব-চিনি দিয়ে পুজো দিয়েছিলেন। শোনা যায়, নটসম্রাট গিরিশচন্দ্র প্রতিটি নাটক লেখার পর সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পায়ে উৎসর্গ করতেন।
বসুমতী সাহিত্য মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ব্যবসায় মন্দা চলতে থাকায় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে বলেছিলেন, “যা উপেন, সিদ্ধেশ্বরীর কাছে মানত কর। তোর এক দরজা যেন শত দরজায় পরিণত হয়।” মা সিদ্ধেশ্বরীকে শ্রীরামকৃষ্ণ আদর করে ডাকতেন ‘গিন্নিমা’ বলে। সেই থেকে কুমারটুলির সিদ্ধেশ্বরী কালী ‘উত্তর কলকাতার গিন্নিমা’ নামে পরিচিত।
পথনির্দেশ
মন্দিরটি শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে মদনমোহনতলা স্ট্রিট ধরে চলে যান রবীন্দ্র সরণিতে। ডান দিকে ঘুরলেই সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির।
আরও পড়ুন
কালীতীর্থ: কাশীপুরে বামনদাস মুখোপাধ্যায় কালীবাড়ি