Home খবর কলকাতা শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেমবিহারে আগমনী গানের আসর মন ভরিয়ে দিল দর্শক-শ্রোতাদের  

শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেমবিহারে আগমনী গানের আসর মন ভরিয়ে দিল দর্শক-শ্রোতাদের  

0

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেবীপক্ষের সূচনা হতে তখনও দিনদশেক দেরি। সে দিনের সন্ধ্যায় যেন উমা মা নেমে এলেন এই ধরায়। আগমনী গানের আসর বসেছিল দমদমের শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেমবিহার আশ্রমে। জমজমাট সেই আগমনী-আসর বুঝিয়ে দিল পুজো একেবারে দোরগোড়ায়।

সে দিনের মধ্যমণি ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ছিলেন চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর কন্যা দীপাবলী দত্ত। গান গাইলেন প্রদীপ দত্তও। কণ্ঠশিল্পীরা ছাড়াও ওই সংগীতানুষ্ঠানে যন্ত্রসংগীত পরিচালনায় ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং তবলা-খোল-ঢাকে পার্থ মুখোপাধ্যায়। চণ্ডীপাঠ ও স্তোত্রপাঠ করে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দিলেন সায়করাজ। তাঁর অপূর্ব পাঠ দর্শক-শ্রোতাদের মনে করিয়ে দিচ্ছিল মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাঠকে।  

শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেমবিহারের আচার্য স্বামী সম্বুদ্ধানন্দ, আশ্রমের অন্যান্য সন্ন্যাসী মহারাজ ও ব্রহ্মচারী মহারাজ এবং আশ্রমের ভক্তরা সে দিন দর্শক-শ্রোতা হিসাবে সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।      

দুটি রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে এ দিন অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রদীপ দত্ত – ‘এত আনন্দধ্বনি উঠিল কোথায়’ এবং ‘ভয় হতে তব অভয়মাঝে নূতন জনম দাও হে’। তাঁর সুপরিবেশনা সে দিন সন্ধ্যার সাংগীতিক বাতাবরণটি তৈরি করে দেয়।

তার পরেই শুরু হয় আগমনী গান। মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্র ‘সিংহস্থা শশিশেখরা মরকতপ্রেক্ষা’ পাঠ করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন চন্দ্রাবলী। তার পরেই চলে আসেন আকাশবাণী কলকাতার বিখ্যাত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানের সেই বিখ্যাত গানে, সুপ্রীতি ঘোষের গাওয়া ‘বাজল তোমার আলোর বেণু, মাতল রে ভূবন’।

সংগীত পরিবেশন করছেন চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত। পাশে রয়েছেন কন্যা দীপাবলী দত্ত।

এর পরেই সায়করাজের চণ্ডীপাঠ। চণ্ডীপাঠের পরে চন্দ্রাবলী ফিরে গেলেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানের সেই আর-একটি বিখ্যাত গানে – শিপ্রা বসুর কণ্ঠে গাওয়া ‘ওগো আমার আগমনী আলো’। এর পরই চন্দ্রাবলী-কন্যা দীপাবলীর পরিবেশনা – দ্বিজ রামপ্রসাদের লেখা ‘এ বার আমার উমা এলে আর উমায় পাঠাব না’। দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরে গেল।

এ বার চন্দ্রাবলী ধরলেন ‘আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও জননী এসেছে দ্বারে’ এবং ‘দেখো না নয়নে গিরি, গৌরী তোমার সেজে এল/ দ্বিভুজা ছিল যে উমা দশভুজা কবে হল’।

দিনটা ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৪ সাল। শরৎকালের বিকেল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পশ্চিমের গোল বারান্দা থেকে নেমে নরেন্দ্রর (পরবর্তীকালে স্বামীজি) সঙ্গে গঙ্গার পোস্তার উপর এলেন। সঙ্গে রয়েছেন মাস্টার (শ্রীম)। নরেন্দ্র ধরলেন গিরিশ ঘোষের লেখা গান –  ‘কেমন করে পরের ঘরে ছিলি উমা বল মা তাই’। গিরিশবাবু তাঁর ‘আগমনী’ নাটকের জন্য এই গান লিখেছিলেন। সে দিনের সান্ধ্য-আসরে সেই গান শোনালেন চন্দ্রাবলী।   

আবার সায়করাজের স্তোত্রপাঠ। তার পর দুটি গান পরিবেশন করলেন চন্দ্রাবলী – ‘ভুবনমোহিনী মা’ এবং কাজী নজরুলের মাতৃবন্দনা ‘ও মা দনুজ-দলনী মহাশক্তি নমো অনন্ত কল্যাণদাত্রী’।

এর পর শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেমবিহারের আচার্য স্বামী সম্বুদ্ধানন্দের রচনা ও সুর করা দুটি গান পরিবেশন করলেন মেয়ে ও মা। প্রথমে কন্যা দীপাবলী পরিবেশন করলেন ‘উজ্জ্বল এক সকাল এল বন্ধ দুয়ার ভেঙে’। তার পর চন্দ্রাবলী গাইলেন ‘আলতারাঙা পায়ে ধরণীতে তুমি এসেছ মাগো’। এই গানদুটির সুরমূর্ছনায় মোহিত শ্রোতাকুল।

উমা মা বাপের বাড়ি এসে গিয়েছেন। উমাকে আবাহন করার জন্য প্রস্তুত গিরিরাজপুরী। সবাই সেখানে আনন্দে মেতে উঠেছে, তৈরি হচ্ছে মণ্ডা-মিঠাই, আরও কত কী। কমলা ঝরিয়ার সেই বিখ্যাত গান ‘আনন্দে মাতে গিরিরাজপুরী’ পরিবেশন করেন চন্দ্রাবলী।

এর পরই আগমনী গানের অনুষ্ঠান শেষ হল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সেই বিখ্যাত স্তোত্র-গান – ‘জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনী রম্যকপর্দিনী শৈলসুতে’। এই গানে গলা মেলালেন সুব্রতবাবুও। এ দিনের অনুষ্ঠান শেষ হল সায়করাজের স্তোত্রপাঠের মধ্য দিয়ে।

বেজে উঠল পার্থ মুখোপাধ্যায়ের ঢাকের বোল। গোটা প্রেক্ষাগৃহ আসন্ন পূজার উন্মাদনায় মেতে উঠল। মনে হচ্ছিল এক পক্ষকাল পরে নয়, পুজো এসেই গেল। এ দিনই যেন সূচিত হল বাঙালির ঘরে উমার আগমন।

ছবি: শ্রয়ণ সেন

আরও পড়ুন

৮২তম বছরে সিংহী পার্ক সর্বজনীন তুলে ধরছে রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী কাঠপুতুলের নাচ

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version