ইনদওর: যে সব মেয়েরা ‘নোংরা পোশাক’ পরেন, তাঁদের শূর্পণখার (Shurpanakha) মতো দেখতে লাগে! গত বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে মহিলাদের পোশাক নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya)। যথারীতি তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র ঘরে ফের বিতর্কে জড়ালেন বিজেপি নেতা।
‘নোংরা পোশাক’
অনেকেরই হয়তো মনে রয়েছে, ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এই কৈলাস। একাধিক বার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে চর্চায় এসেছিলেন সেসময়। এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভিডিও ক্লিপে কৈলাসকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমাদের দেশে মেয়েদের দেবীর আসনে বসানো হয়। অথচ, সেই মেয়েরাই আজকাল দেখি নোংরা পোশাক পরছে। নোংরা পোশাক পরলে মেয়েদের দেবী তো মনে হয়ই না। মনে হয় শূর্পণখা।”
এখানেই থামেননি বিজেপি নেতা, সোজা মেয়েদের ‘শরীর’ নিয়ে কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বলছেন, “ঈশ্বর এত ভালো শরীর দিয়েছেন। তা হলে নোংরা পোশাক পরা কেন? ভালো পোশাক পরুন।”
অন্য দিকে, যুবসমাজের অবক্ষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে কৈলাস বলেছেন, “আমি যখন দেখি ছেলেমেয়েরা ড্রাগসের নেশা করছে, তখন মনে হয় গাড়ি থেকে নেমে পাঁচ-সাতটা থাপ্পড় কষিয়ে দিই। আমাদের দেশ আজ সবদিক থেকে বিশ্বের সেরা। শুধু যুবসমাজ পিছিয়ে পড়ছে।”
কাঠগড়ায় কৈলাস
কৈলাসের এইসব মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক দানা বাঁধে। কৈলাসের এইসব মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করছে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। বিজেপি নেতার কথা আসলে দেশের মহিলা ও যুবসমাজের প্রতি অবমাননা বলে সোচ্চার হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
কংগ্রেসের মুখপাত্র সঙ্গীতা শর্মা বলেন, “বিজেপি নেতারা বারবার নারীদের অপমান করেন। এটা তাঁদের চিন্তাভাবনা এবং তাঁদের মনোভাবের বহির্প্রকাশ। যে কারণে স্বাধীন ভারতে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় নারীদের শূর্পণখা বলে ডাকছেন এবং তাঁদের পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন।”
সরব বাংলার শাসক দল তৃণমূলও। টুইটে লেখা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত ক্রমশ পিছচ্ছে। মহিলা যা খুশি তাই পোশাক পরার জন্য বিজেপি নেতারা এখন নারীদের রাক্ষসের সঙ্গে তুলনা করছেন! আচরণের জন্য কৈলাস কী নিজের ছেলেকে তিরস্কার করবেন।”
শূর্পণখা কে?
রামায়ণের একটি চরিত্রের নাম শূর্পণখা। যিনি রাবণের বোন। রাক্ষস পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে সূর্পনখা নিজের শারীরিক গঠণ পরিবর্তন করার ক্ষমতা ছিল। তিনি নিজের মুখমণ্ডলের পাশাপাশি গলার স্বরও পরিবর্তন করতে পারতেন। বাল্মিকী মুনির কথা অনুসারে, সূর্পনখার শারীরিক গঠণ এবং গায়ের রং অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ছিল।
লক্ষ্মণকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন। শূর্পণখার নাক এবং কান কেটেছিলেন লক্ষ্মণ। কথিত আছে, যদি সূর্পণখা না থাকত, তাহলে বোধহয় এই রামায়ণও লেখা হতো না। কারণ, লক্ষ্মণ এই শূর্পনখার নাক কাটার পরেই রাম এবং রাবণের মধ্যে দ্বৈরথ শুরু হয়। সেই শূর্পণখার সঙ্গে এ বার তরুণীদের তুলনা টানলেন বিজয়বর্গীয়।